পান্থপথ মোড় থেকে কারওয়ান বাজারের দিকে যাচ্ছি। পান্থপথ সিগন্যালে আটকে আছি। সাঁই করে একটা বাইসাইকেল পাশ কেটে চলে গেল। শহুরে জীবনে অতি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু যাত্রীর দিকে তাকিয়ে ঘটনা আর সাধারণ মনে হলো না। মুখে বেশির ভাগ পাকা দাঁড়ি। লম্বা পাতলা গড়নের বাইসাইকেল চালকের বয়স আনুমানিক ষাট বছর। পায়ে কেডস, গায়ে টি–শার্ট, হাতে গ্লাভস, মাথায় হেলমেট। দেখে বোঝা যায় নেশাদার ও পেশাদার সাইকেল রাইডার। তার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলাম। দেখি ভার্সিটি পড়ুয়া কয়েকটা ছেলে সেলফি তুলছে। পাঁচ মিনিট সময় চেয়ে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালাম।
তার নাম আবদুর রহিম। বয়স ৬৫। বাবা মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার আবদুর রহমান। থাকেন জিঞ্জিরা। পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। রেডিমেড পোশাক বিক্রির দোকান আছে।
সাইকেল চালিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে যাচ্ছেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। হাসপাতালে। রোগী দেখতে। সাইকেল চালিয়ে কেন যাচ্ছেন? আবদুর রহিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার বাইসাইকেল ভালো লাগে। বড় হয়ে জেনেছি, সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। ডায়বেটিস হয় না। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। হার্ট ভালো থাকে। রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে। এছাড়া ঢাকার রাস্তায় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যায়। বাইসাইকেলে যানজট থাকলেও বাম দিক দিয়ে দ্রুতে চলে যাওয়া যায়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম।’
আবদুর রহিম জানান, তাকে দেখে অনেক তরুণ অনুপ্রাণিত হয়। অনেকে ছবি তোলেন। যদিও রাস্তায় থামিয়ে ছবি তোলা তার পছন্দ না। তবু তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে এই আবদার সহাস্যে মেনে নেন।
আবদুর রহিমের সাইকেলটি জার্মানির TREK ব্রান্ডের। দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এত টাকা দিয়ে সাইকেল কেনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সাইক্লিং আমার শখ। সেই সাথে সময় বাঁচাচ্ছে। টাকা বাঁচাচ্ছে। দামি সাইকেল চালাতে কষ্ট কম হয়। এছাড়া এইটা আমার খুব পছন্দের। তাই দাম বেশি হলেও কিনেছি। পাঁচ বছর ধরে টাকা জমিয়ে একটা কিনেছি। প্রথম সাইকেল ছিল ১৪ হাজার টাকায় কেনা। ছোটবেলায় কিনেছিলাম।’
কেরানীগঞ্জ থেকে বসুন্ধরা যেতে তার সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা। বাসে আরও বেশি সময় লাগে বলে তিনি জানান। কেরানীগঞ্জ সাইক্লিং নামে তাদের একটি গ্রুপ আছে। যেই গ্রুপে সব বয়সের মানুষ আছে। তারা মাঝে মাঝে দল বেঁধে সাইক্লিংয়ে যান। এতে প্রচুর আনন্দ পান। শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে। দীর্ঘদিন কোনো অসুখে ভোগেন নাই আবদুর রহমান। সাইক্লিংয়ের ফলেই তিনি সুস্থ ও ফিট থাকেন বলেই বিশ্বাস করেন। তরুণ ও ছাত্রদের সাইক্লিংয়ের পরামর্শ দেন আবদুর রহিম।