সুন্দরবনের পশুর নদীতে কয়লা বোঝাই কার্গো ডুবে যাওয়ায় মারাক্তক পরিবেশ বির্পযয়ের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। কার্গোটি ডুবে যাওয়ার কারণে সেখানকার জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি যতটা দ্রুত সম্ভব এই কয়লা অপসারণ করে নদীটিকে দূষণমুক্ত করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, এর আগে যে দুইটি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে সেই দুই ঘটনার চেয়ে এবারের কয়লা ডুবির ঘটনা সুন্দরবনের নদীর পানি বেশি দূষিত করবে। কারণ তেল ভাসমান পানির ক্ষতি করে তাও উপরের স্তরে আর সার পানিতে দ্রবীভূত তাই জলের সাথে মিশে জোয়ারের সাথে গভীর সমুদ্রে চলে গেছে কিন্তু কয়লা না ভাসমান না দ্রবনীয়। আর কয়লার যে সালফিউরিক এসিড তৈরির ক্ষমতা তা কম সময় হলেও এই দ্রবণ নদীর পানির জন্য ক্ষতিকর। তবে কয়লা তাড়াতাড়ি পানি সরানো সম্ভব বলে একটা সুবিধা পাওয়া যাবে বলে জানায় বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে পরিবেশ রসায়ণবিদ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহোযোগী অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ কয়লাবাহী কার্গো ডুবিতে মারাক্তক পরিবেশ দূষণের অশঙ্কা করছি। আর বাংলাদেশে সাধারণত পিট কয়লা আমদানি করা হয়। এ কয়লায় প্রচুর পরিমাণে ডাস্ট থাকে। এই ডাস্ট পানির সাথে মিশে পানির ঘনত্বকে বাড়িয়ে তুলবে; সেই সাথে কার্বন পার্টিকেলগুলো বেড়ে যাবে। ফলে একদিকে যেমন পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে মাত্রা কমে গিয়ে অক্সিজেনের শুন্যতা দেখা দিবে অন্যদিকে পানিতে বসবাসকারী প্লাংটন এবং জলজ প্রাণী মাছ ও অনান্য প্রাণী মরা পড়বে।
তিনি আরো বলেন, পানিতে সালফার থাকার ফলে পিএইচ (ph) মাত্রা কমে গিয়ে মাছ মরে যাবে।
যদি তাড়াতাড়ি নদীর পানি থেকে কয়লা অপসরণ করা হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমবে জানিয়ে তিনি বলেন, তেলের মতো কয়লার ফিল্টারিং হওয়ার সুযোগ নাই তবে দুই একদিনের মধ্যে অপসারণ করা গেলে পানি দূষণের পরিমাণ কিছুটা কম হবে কিন্ত পাঁচশত টন কয়লা এততাড়াতাড়ি অপসরণ করার সম্ভাবনা খুব কম।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সেফগার্ড’ র আহবায়ক ও পরিবেশ গবেষক ম.আবদুর রহমান রানা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কয়লা পানিতে তলিয়ে গিয়ে মাটির সাথে আটকে আছে। কয়লার একটি উপাদান সালফার আরেকটি কার্বন। এই দুটোই পানির সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড ও কার্বনিক এসিড তৈরী করবে ধীরে ধীরে এই এসিডগুলে একদিকে পানি ও মাটির গুনাগুন নষ্ট করবে। অন্যদিকে কার্বনিক এসিড শামুক জাতীয় খোলসওয়ালা সকল জীব ও মাছের চামড়া নষ্ট করবে যার ফলে এসব জীব দ্রুত মরতে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, সালফিউরিক এসিড খুবই মারাত্মক এসিড যা পানির সাথে গাছের গোড়ায় লেগে গাছ মেরে ফেলবে এবং জলজ সকল প্রানী হত্যা করবে। তবে, এখন জানতে হবে যেখানে এই কয়লা ডুবির ঘটনা ঘটেছে ওখানকার পানির গভীরতা কেমন ছিল, জোয়ার ভাটা কেমন তার উপরেও ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করবে।
এর আগে, ৫ মে ঢাকা যাওয়ার পথে বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা এলাকায় এমভি জাবালে নুর নামে সারবাহী কার্গো জাহাজ ডুবে যায়। এবং গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে শুগরমারী এলাকায় এমটি টোটাল নামে একটি জাহাজের ধাক্কায় ওটি সাউর্দান স্টার-৭ নামে একটি তেলবাহী জাহাজ ডুবে যায়।
২২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের একটি দল পর্যবেক্ষণের জন্য আসে। ওই বিশেষ দলটি পরামর্শ দেয় সুন্দরবন অঞ্চলের নদীগুলোতে যে কোন নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার।