কলকাতার হাওড়ার রামরাজা তলার অদূরে সাঁতরাগাছিতে বাড়ি হাসি খুশি মেয়েটি পল্লবী দে। তাকে আদর করে সবাই মিষ্টু বলে ডাকতেন। প্রথমে হাওড়াতেই থাকতেন, নিজের বাড়িতে। দেড় বছর আগে টেলিভিশনে শুটিং এর কাজে যাতাযাতের সুবিধার জন্য, সেইসঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে একসঙ্গে থাকবে বলে এসেছিলেন যাদবপুরের গড়ফার কে পি রায় লেনের একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে। দেড় বছর ছিলেন প্রেমিক সাগ্নিক নামের একজনের সঙ্গে।
এরপর গড়ফার গাঙ্গুলিপুকুর এলাকার অন্য আরেকটি বহুতল ফ্ল্যাটে গত ২৪ এপ্রিল তারা দুজনেই ভাড়া এসেছিলেন। নতুন ফ্ল্যাটে ভাড়া আসার দেড় মাসের মধ্যেই এমন ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল তাকে।
পরিবার ও ঘনিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এমন রহস্যজনক ঘটনার রহস্যের শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। এখানে আসার আগে পল্লবী থাকতেন হাওড়ার নিজের বাড়িতে। নতুন ফ্ল্যাটে আসার পর থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়, ঝগড়াও হয়।
রবিবারের সকালে ঘটনাস্থল থেকে কোনও রকম সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি বলে জানা যায় পুলিশসূত্রে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গড়ফার ফ্ল্যাটে দুজনেই ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যরাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিনেত্রী পল্লবী দে ও তার প্রেমিক সাগ্নিক এর তুমুল ঝগড়া হয়। কী কারণে ঝগড়া জানা যায়নি। পুলিশ তদন্ত করছে।
পরিবারের অভিযোগ খুন করা হয়েছে পল্লবীকে। তাদের দাবি ফ্ল্যাটে পল্লবী একাই থাকতো। মাঝে মাঝে তারা যেতেন, বললেন পল্লবীর বাবা। শনিবার দুপুরে ওর মাকে শেষ ফোন করে পল্লবী, বললেন পল্লবীর বাবা। তারা বন্ধু সাগ্নিককেই দুষছেন। সেই খুন করেছে, এমনই সন্দেহ পরিবারের। তবে রবিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এসেছে, তাতে পুলিশ আত্মহত্যা বলেই ধারণা করছে।
এদিকে পল্লবীর প্রেমিক সাগ্নিককে আটক করে জিজ্ঞেসাবাদ করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার ফোনটিও। তদন্ত এগোলে বোঝা যাবে, অভিনেত্রীকে খুন না নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। আর আত্মহত্যা করলে, তাকে বাধ্য করা হয়েছে কী না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। পরিবার ও পুলিশ জানাচ্ছে ঘটনার কথা প্রথম সাগ্নিকই তাদের জানিয়েছে।
জানা যায়, পল্লবীর বন্ধু সাগ্নিক রবিবার সকালে দরজার বাইরে বেড়িয়ে আসেন সিগারেট খেতে। সকাল ৯ টা ৪০ নাগাদ ভেতরে গিয়ে দেখেন পল্লবী দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। দরজার ফাঁক দিয়ে পল্লবীকে সিলিং ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে দেখে সাগ্নিক। চিৎকার করে জোড়ে ধাক্কা মেরে, দরজা ভেঙ্গে দেয়। ততক্ষণে সব শেষ। সারারাত ঝগড়ার পরই কী সিগারেট খাওয়ার ফাঁকেই পল্লবী বিছানার চাদর দিয়ে গলায় দড়ি দিল? উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
তবে প্রাথমিকভাবে অভিনেত্রীর গলায় দড়ির দাগ রয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে পুলিশ!
টেলি তারকা হিসেবে তার খুব বেশি দিনের কাজ শুরু নয়। ‘আমি সিরাজের বেগম’ ধারাবাহিকে পল্লবীর বিপরীতে ছিলেন শন বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই জনপ্রিয়তার দৌড় শুরু। অভিনেত্রী সুপ্রিয়ার নাতি শনের সঙ্গে পল্লবীর রসায়ন জনপ্রিয় হয়েছিল দর্শকমহলে। টলিউডে কাঙ্ক্ষিত ‘ব্রেক’ পেয়ে জনপ্লাবন এগিয়ে আসছিল পল্লবীর দিকে। আসতে শুরু করেছিল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও। আস্তে আস্তে টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠছিলেন পল্লবী।
‘কুঞ্জছায়া’ ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়, পরে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আসে তার কাছে। ‘মন মানে না’ ধারাবাহিকে তিনি আবার নায়িকার চরিত্র পান। জয় করছিলেন পর্দা। তাতেই কী দ্বন্দ্ব শুরু সাগ্নিকের সঙ্গে? গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুটিংও করেন তিনি! তারপরই কী এমন হল? শেষ ৪৮ ঘণ্টাই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর সাইটে পোস্টও করেছেন পল্লবী!