যুক্তরাজ্যের টিনেজারদের যৌনতার দিকে আগ্রহ কমছে। তার বদলে তারা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করছে এবং অনলাইনে রোমান্টিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পছন্দ করছে বলে জানিয়েছে একটি গবেষণা সংস্থা। ১৬-১৮ বছর বয়সী ১০০০ জনের উপর গবেষণা চালিয়ে এটাও দেখা গেছে যে তারা কম পানীয় পান করছে।
ব্রিটিশ প্রেগনেন্সি অ্যাডভাইজরি সার্ভিস (বিপিএএস) জানিয়েছে, ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে টিনেজারদের গর্ভধারণের মাত্রা বেশ কমে গেছে। জরিপে অংশ নেয়া টিনেজারদের দুই তৃতীয়াংশ জানিয়েছে তারা কখনো যৌন সম্পর্কে জড়ায়নি। এবং ২৪ শতাংশ জানিয়েছে তারা কখনো অ্যালকোহল পান করেনি।
বিপিএএসের গবেষণা বলছে, সম্প্রতি টিনেজাররা আরো বেশি সংবেদনশীল হিসেবে গড়ে উঠছে, তারা তাদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে আরো বেশি স্থিরমনা এবং তারা গর্ভধারণ এড়িয়ে চলতে চাইছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশ জানিয়েছে, পরীক্ষায় ভালো করা এবং নিজের পছন্দের ক্যারিয়ারে সফল হওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। সেই সঙ্গে ৬৮ শতাংশ রয়েছে যারা মনে করেন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তরুণরাও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর থেকে বেশি গুরুত্ব দেয় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর দিকে। তবে অনেকে বলছেন কাজ ও পড়োশোনা শেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সময় বের করাটা খুব কঠিন। টিনেজারদের দৈনন্দিন দিনলিপি বলছে তারা দিনে অন্তত ৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করছে অনলাইনে, কখনো পড়াশোনার জন্য আবার কখনো কোনো কাজ ছাড়াই।
তাদের খুব কমই অনলাইনে নিয়মিত কথা বলা মানুষগুলোর সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলেছে। তাদের ৭০ শতাংশই একে অপরের সঙ্গে সপ্তাহে চারবার বা তার বেশিবার কথা বলেন। গবেষণা বলছে যেসব টিনেজাররা বন্ধুদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করে তারা যৌন সম্পর্কে আরেকটু সক্রিয় হয়।
সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাজ্যে টিনেজারদের গর্ভধারণ কমে এসেছে গত ২০ বছরে। এসব পদক্ষেপ অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আরো সহজলভ্য করা এবং স্কুল ও ক্লিনিকে যৌনশিক্ষা দেওয়া হয় ১০ বছর। তারপর ২০০৭ সাল থেকে পরিমাণ কমে আসে ৫০ শতাংশ।
১৯৬৯ সালে ১৫-১৭ বছর বয়সী ১০০০ জনের ৪৭ জন গর্ভধারণ করতো ২০১৬তে এসে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৮.৯ মিলিয়নে।
বিপিএএস জানিয়েছে এখন সবার মনোভাবও পরিবর্তন হয়েছে। টিনএজ মা-বাবা হওয়ার যে স্টিগমা ছিলো সেটা দূর হয়েছে। এমনকি যারা গর্ভধারণ করছেন তারাও সরকার বা পরিবার থেকে সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা করছে না। জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগই জানিয়েছে তারা যৌন সম্পর্কের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে।
বিপিএএসের রিসার্চ পলিসির প্রধান ক্যাথেরিন ও’ব্রিয়েন বলেন, ২০১৯ সাল থেকে স্কুলে বাধ্যতামূলক সম্পর্ক ও যৌন শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনার কারণে সেই সংখ্যাটা আরো কমে আসবে। তবে এখন যে পরিবর্তনটা এসেছে তাতে ধারণা করা যায় তরুণরা নিজেদের জীবন নিয়েই ভিন্নভাবে ভাবছে। তারা ভাবছে তারা কিভাবে নিজেদের জীবন যাপন করবে। অ্যালকোহল গ্রহণ বা যৌনতার প্রসঙ্গ এলে তারা দায়িত্ব ও সঠিক সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি।