ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের কী কী ক্ষতি করে গেছে তা নিয়া বই-পুস্তক লিখে এবং ফেইসবুকে কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বেশ আলোচনায় আছেন শশি থারুর। ভদ্রলোক কথা খুব ভালো বলেন, তথ্য উপাত্ত দিয়েও কথা বলেন।
ব্রিটিশদের হাতে ভারতবর্ষের অনেক ক্ষতি হয়েছে এতে কোনই সন্দেহ নাই। কিন্তু শশি থারুর যেই টোন ব্যবহার করে বইটা লিখেছেন, সেখানে অনেক তথ্য উপাত্ত থাকলেও, তার লেখায় একটা লুজার এর টোন আছে। অনেকে এটাকে বলে ভিক্টীমহুড মেন্টালিটি। যেটা কোন উইনারের মধ্যে থাকে না।
ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ত্যাগ করে যাবার সময় পলিটিকাল সেটেলমেন্ট এর মধ্যে দিয়ে সরে গেছে। তারা চলে যাবার সময় ভারতবর্ষে কোন ফিজিকাল যুদ্ধ বা ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে নাই। মোটা দাগে ব্রিটিশ পরবর্তী ভারতও ছিল শান্তি পূর্ন। তারা চলে যাবার পরে ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে ভারত বর্ষে এমন কোন যুদ্ধ হয় নাই যেটাতে পুরা ভারত বর্ষে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে।
১৯৬৩, ১৯৭১, ১৯৯৮ সালের ভারত-পাকিস্তান রিজিওনাল যুদ্ধ আর চীনের সাথে ভারতের কিছু বর্ডার কনফ্লিক্ট বাদ দিলে, ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে এমন কোন যুদ্ধ ভারতে হয় নাই যা কয়েক দিনে মধ্যে শেষ হয় নাই।
অন্যদিকে ১৯৪৭ পরবর্তী ৭০ বছরের সারা পৃথিবিতে কম পক্ষে ৩টা দেশের উদাহরন দেয়া যায় যারা এই সময়ে সম্পুর্ন ভাবে ধ্বংস হয়ে আবার নিজেকে গড়েছে।
১৯৪৫ সালের জার্মানি ও জাপানের ধংসের ধারে কাছে ধ্বংসযজ্ঞ অন্য কোন জাতি দেখে নাই। ধ্বংসের পরেই এই দুই জাতি মাথা ঠান্ডা করে আবার ঘুরে দাড়িয়েছে। আগের শত্রুকে মিত্র বানিয়েছে, টাকা কামিয়েছে, হার্ড ওয়ার্ক করেছে।
১৯৭০ সাল পর্যন্ত গনচীন ছিল আর একটা প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট ধ্বংস যজ্ঞের বদ্ধভুমি। চীনে ঔপনিবেশিক শক্তিরা যে পরিমান অত্যাচার ও অন্যায় যুদ্ধ করেছে, তার ধারে কাছে অন্যায় যুদ্ধ আর কোন জাতির উপরে চাপানো হয়েছে কিনা তা বলা মুশকিল। যেমন ১৮ শতাব্দির আফিম যুদ্ধগুলোতে চীনের হাত-পা ভেঙ্গে শরীরের মাংস কেটে নিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ-জাপান এলাইয়েন্স।
১৯৪৫ পরবর্তী সময়টা ছিল মাথা ঠান্ডা করে কাজ করার জন্যে অসাধারন একটা সময়। এই সময়ে জাপান-জার্মানি-চীন পরিপূর্ন ধ্বংসযজ্ঞ থেকে উঠে এসেছে। আর ভারতবর্ষ এই একই সময়টাতে মোটা দাগে শান্তিপূর্ন অবস্থায় থেকেও এখন শশি থারুরের বই পরে ২০০ বছর আগে কে তার পেছনে হাত দিয়েছে তা ভেবে মায়া কান্নায় জামা ভেজাচ্ছে।
পরাজিত এবং বিজয়ীর পার্থ্যক্যটা এখানেই।
বিজয়ী হতে চাইলে জার্মানি, জাপান, চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এই দেশগুলোর ইতিহাস পড়ুন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)