চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পরপর দুই মেয়াদে কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না: ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার

ঘোষণা

পরপর দুই মেয়াদে কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যও আনা হবে অঙ্গীকার করে একাদশ জাতীয় সংসদে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’-এই স্লোগান নিয়ে সোমবার রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে আনুষ্ঠানিভাবে এই ইশতেহার দেয় ঐক্যফ্রন্ট।

ইশতেহারটি ৩৫টি দফায় ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি দফায় বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। মন্ত্রিসভাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হবে। পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না’।

ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের চতুর্থ দফাটি হলো ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ স্থাপন। ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করে জোটটি। এর মধ্যে রয়েছে, দেশের বিচার ব্যবস্থা, বিশেষ করে নিম্ন আদালত এখনো কার্যত সরকারের অধীনেই আছে। সংবিধানের ১১৫ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দেয়া হবে, সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে শুধু অনাস্থা ভোট এবং অর্থবিল ছাড়া অন্য যে কোন ক্ষেত্রে দলীয় সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে না এমন সংশোধনী ৭০ অনুচ্ছেদে আনা হবে, সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা হবে, সকল অংশীজনের সাথে আলচনার মাধ্যমে উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে, সকল সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য সুস্পষ্ট আইন তৈরি করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ সব সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন (বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিসহ) গঠন করা হবে। উক্ত কমিশন কর্তৃক প্রাথমিক মনোনয়ন এর পর নিয়োগের পূর্বে তাদের নাম জনগণের মতামতের জন্য প্রচার করা হবে।

এছাড়া উল্লেখ আছে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উল্লেখযোগ্য পদ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বন্টন করা হবে, সংসদের ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে, আইন এবং রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং পর্যালোচনাই হবে সংসদ সদস্যদের মূল কাজ। খবরদারি নয়, সংসদ সদস্যগণ স্থানীয় উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের সাথে সহায়তামূলক ভূমিকা পালন করবেন, বিরোধী দলের সাংবিধানিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। রাষ্ট্রপরিচালনায় বিরোধী দলের মতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হবে।

ইশতেহারের ৫ম দফাটি হচ্ছে ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এবং বিকেন্দ্রীকর’। এই ধারার অধীনে বলা হয়, দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে, বর্তমানে কমবেশি ৫% বাজেট স্থানীয় সরকার এর মাধ্যমে ব্যয় এর পরিবর্তে প্রতিবছর ৫% হারে বাড়িয়ে পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৩০% বাজেট স্থানীয় সরকার এর মাধ্যমে ব্যয় এর বিধান করা হবে, বাজেটে প্রতিটা জেলার জন্য জেলা বাজেট এবং সেটা পর্যায়ক্রমে নিচের দিকে স্থানীয় সরকারের মধ্যে বণ্টন করা হবে, জেলা পরিষদ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে, পৌর এলাকাগুলোতে সব সেবা সংস্থা মেয়রের অধীনে রেখে সিটি গভর্নমেন্ট চালু করা হবে, স্থানীয় সরকারের দলীয় প্রতীক এর ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রথা বাতিল করা হবে, ঢাকার কাছাকাছি বিভিন্ন জেলায় উন্নত নাগরিক সুবিধাসহ কয়েকটি শহর গড়ে তোলা হবে যেখান থেকে ঢাকায় খুব দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে, জনকল্যাণে প্রশাসনিক কাঠামো প্রাদেশিক পর্যায়ে বিন্যস্ত করা এবং স্থানীয় সরকারের স্তর নির্ধারনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করা হবে।

ড. কামাল হোসেন এর উপস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি শুরুতে বলেন, নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সকল নাগরিকের কল্যাণে সরকার পরিচালনা করবে। এই পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐক্যমত্য, সকলের অন্তর্ভুক্তি এবয়ং যে কোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত থাকা। ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ সংবিদানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় যাবতীয় পদক্ষেপের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রের মালিকগণের মালিকানা সুদৃঢ় করা। রাষ্ট্রের এই মালিকানা শুধুমাত্র নির্বাচনে যেতা দলের মানুষের নয়, এই মালিকানা থাকবে নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদেরও

তিনি বলেন, এই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচনে পরাজিতদের মতামত এবঙ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।

ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারকে সাম্প্রতিককালের একটি বৈপ্লবিক ইশতেহার হিসেবে ঘোষণা করেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি এই ইশতেহারে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।