কথিত পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে পটুয়াখালীতে এক গৃহবধুকে সালিশ বৈঠকে বেঁধে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে সমাজপতিরা। খবর পেয়ে নির্যাতিতাকে শনিবার মধ্যরাতে গলাচিপা থানা পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে আসে।
শনিবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ওই নারীর কাটা চুল ও লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১০/১২ অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিতার স্বামী। এজাহারভুক্ত আসামী মো. সামসুল হক ডাকুয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত নির্যাতনকারী দলনেতা স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই গা ঢাকা দিয়েছেন।
গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ইছাদি গ্রামের ওই গৃহবধুর বিরুদ্ধে তার ভাসুরের ছেলের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের মিথ্যা অভিযোগ এনে গত শনিবার সন্ধ্যায় গলাচিপা-দশমিনা আসনের সংসদ সদস্য আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনের ছোট ভাই গজালিয়ার ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও গলাচিপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি খালেদুল ইসলাম স্বপনের নেতৃত্বে বর্তমান চেয়ারম্যান এস.এম.কুদ্দুস, নবনির্বাচিত মেম্বাররা, মাওলানা মান্নান, মাওলানা নাসির ও এমপির ভাগ্নে টিপুসহ ১৫/২০ জন সালিশ বৈঠক বসায় ইউনিয়ন পরিষদে।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে শতশত গ্রামবাসীর সামনে সেখানে দুই অভিযুক্তকে হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে মারধর করে তারা। পরে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের নির্দেশে দু’জনের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। ঘটনার পর নির্যাতিত ভাসুরপুত্রের কোন হদিস মিলছে না।
খবর পেয়ে শনিবার মধ্যরাতেই গলাচিপা থানা পুলিশ নির্যাতিতা ওই গৃহবধুকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে। রোববার তাকে তার স্বামীর দায়ের করা মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নিতে গলাচিপা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাকে স্বামীর জিম্মায় দিয়ে দেন।
গ্রামীন আদালতে বা সালিশে এ ধরণের কোনো বিচার বা রায় দেয়ার এখতিয়ার নেই এবং বিচারের নামে তারা নিজেরাই অপরাধ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আইনজীবীরা।
অন্যদিকে গ্রামীণ আদালতে কাউকে মারধরের সুযোগ নেই, এটি মানবাধিকার লংঘন বলে দাবি করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন মানবাধিকার সংগঠন ব্লাষ্ট-এর জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ।