চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শান্ত পাহাড়ে আবারও অশান্তির কালো মেঘ

সারাদেশ যখন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রস্তুত, তখন পাহাড়ে ঘটলো এক মর্মান্তিক ঘটনা। গুম ও খুনের প্রতিবাদ করতে যাওয়া একদল মানুষের রক্তে লাল হলো গাঢ় সবুজ পাহাড়। আবারও রক্তাক্ত হলো সবুজ পাহাড়ি জনপদ।

শনিবার পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে গিয়ে সকালে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদরে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ৩ জন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ইউপিডিএফ সমর্থক, নেতা ও কর্মী বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ৩ মে দুর্বৃত্তদের গুলিতে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমা নিহত হন। পরের দিন তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফ একাংশের নেতা তপন জ্যোতি চাকমাসহ ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর থেকে আমাদের মতো অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, পার্বত্য রাজনীতিতে অশনী সংকেত ঘনিয়ে আসছে। শিগগিরই এর জেরে সেখানে আরও রক্ত ঝরবে। একের পর এক ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। শেষ পর্যন্ত বোধহয় সেই আশঙ্কা সত্যি হচ্ছে। কারণ, তখন থেকে ইউপিডিএফের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।যেই দলাদলি এখনও বিদ্যমান। এরই মধ্যে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ করেছে। ওইসব হামলায় রক্তপাতের ঘটনাও ঘটে, যা খুবই অপ্রত্যাশিত।

অশান্ত পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তি করে। এতে শান্তিবাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা চুক্তি সাক্ষর করেন। চুক্তির প্রায় গত দুই দশকেও পার্বত্য শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি-এমন অভিযোগ রয়েছে পাহাড়িদের। তাদের দাবি, এখনও চুক্তির অধিকাংশ বিষয় কার্যকর করা যায়নি। ফলে গত কয়েক বছরে পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র মতে, চুক্তি সাক্ষরের পর থেকে গত দুই দশকে সামাজিক অপরাধের বাইরে তিন পার্বত্য জেলায় খুন হয়েছেন ২ হাজার ১৯৯ জন। অপহৃত হয়েছে ২ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই পাহাড়ি। বাঙালিরা খুন হয়েছেন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও চাঁদাবাজির জের ধরে। পাহাড়িদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন দলীয় কোন্দলের কারণে। এরই মধ্যে খাগড়াছড়িতে একসঙ্গে এত মানুষ নিহতের ঘটনা এই প্রথম ঘটলো।

এসব ধারাবাহিক খুনের ঘটনায় অনেকের মতো আমরাও বিচলিত। কারণ, এসব ঘটনায় পাহাড়ে নতুন করে অশান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শান্তিচুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ দুটি বিবাদমান দলের সংঘর্ষে পাহাড়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগে পার্বত্য জেলাগুলোতে শুরু হওয়া এই সহিংসতা জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। পাহাড়ে নতুন করে অশান্তির চক্রান্ত প্রতিহত করতে শান্তি চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়নই হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র।