পোশাক শ্রমিকদের জন্য কারখানার মালিকরা ৬ হাজার ৩৬০ টাকা নুন্যতম মজুরি দেয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা এক ধরনের তামাশা বলে মন্তব্য করেছে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসি।
একইসঙ্গে মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা করা না হলে শ্রমিকেরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নুন্যতম মজুরি বোর্ড মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন সংগঠনের নেতারা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, আইবিসির মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও দেশীয় বাজার পরিস্থিতি এবং বহির্বিশ্বে উৎপাদিত পণ্যের দাম মূল্যায়ন করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত। কারণ একজন শ্রমিককে পরিবারসহ বেঁচে থাকতে হয়।
জীবনযাত্রার ন্যূনতম ব্যয়ের সমপরিমাণ মজুরি পাওয়া শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে উল্লেখ করে সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, এর চেয়ে কম মজুরিতে কাজ করতে সুপারিশ করার এখতিয়ার কোনো বোর্ড বা শ্রমিক পক্ষের নেই। এ ধরনের প্রস্তাব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে। এর ফলে শেষ পর্যন্ত শ্রমিকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রিঅলের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন বলেন, সপ্তম গ্রেড অনুযায়ী নুন্যতম মজুরি ৬ হাজার ৪’শ টাকা, অথচ বিজিএমইএ তা থেকে আরও ৪০ টাকা কমিয়ে দিতে চাইছে। তারা সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে নুন্যতম মজুরি নির্ধারণ করতে দিচ্ছে না।
মজুরি কাঠামোর সর্বশেষ গ্রেড অর্থাৎ, সপ্তম গ্রেডে একজন শ্রমিক ৫ হাজার ৩শ টাকা পাচ্ছেন। এর মধ্যে মূল মজুরি ৩ হাজার টাকা। এর ওপর ৪০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ১ হাজার ২শ টাকা, ২৫০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ২শ টাকা যাতায়াত ভাতা ও খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৬শ ৫০ টাকা রয়েছে। প্রতি কর্মদিবস ২৫ টাকা হারে ২৬ দিনের খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৬শ ৫০ টাকা ধরা হয়েছে।
প্রতিটি গ্রেড শ্রমিকরা মূল মজুরির সঙ্গে অন্যান্য গ্রেডের মত বাসা ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভর্তুকি ভাতা পাচ্ছেন।
শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নুন্যতম মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকা প্রস্তাব দিয়েছেন। আর শ্রমিকদের প্রতিনিধি প্রস্তাব দিয়েছেন ১২ হাজার টাকার।
সরকার ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা শ্রমিক কর্মচারীদের নুন্যতম মজুরি ৮ হাজার ৩০০ টাকা (বেসিক) ঘোষণা করেছে। যার মোট মজুরির পরিমাণ হবে ১৭ হাজার টাকা।
ইন্ডাস্ট্রিঅল নেতারা বলছেন, ৫ বছর আগে ঘোষিত কাঠামো অনুযায়ী এখন ইনক্রিমেন্ট পেয়ে শ্রমিকদের যে মজুরি দাঁড়ানোর কথা, মালিকপক্ষ তার চেয়েও কম দিতে চায়। এটা এক ধরনের তামাশা।
দাবি আদায়ে আগামী ৪ অগাস্ট শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। পরে স্মারকলিপি প্রদান, অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশের মতো কর্মসূচিও পালিত হতে পারে বলে জানান মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মহাসচিব মো. তোহিদুর রহমান প্রমুখ।