চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘নোলক’ নিয়ে মিথ্যাচার করছেন নির্মাতা, দাবী প্রযোজকের

‘বাঁদরের গলায় মুক্তার মালা ঝুলিয়ে দিয়েছি’

‘নোলক’ ছবির পরিচালক রাশেদ রাহাকে বাদ দিয়েছেন এই ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বি হ্যাপি এন্টারটেইনমেন্টের কর্ণধার সাকিব সনেট। শুটিং অর্ধেকের বেশি হওয়ার পর পরিচালককে বাদ দেয়ার এই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। দোষারোপ করা হচ্ছে প্রযোজক সাকিব সনেটকে। ‘নোলক’ ছবির শুটিং চলছে কলকাতায়। সেখানে নেই রাশেদ রাহা। তাকে ছাড়াই শুটিং করা হচ্ছে এই অভিযোগ এনে তিনি গতকাল (রবিবার) বাংলাদেশ পরিচালক সমিতিতে একটি অভিযোগ পত্র দেন।

রাশেদ রাহার এসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রযোজক সাকিব সনেট কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে। রবিবার রাতে কলকাতা থেকে মুঠোফোনে সনেট বলেন, রাশেদ রাহা অভিযোগ পত্রে লিখেছেন নোলকের নতুন পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী। এটি পুরোপুরি মিথ্যে। এই ছবিতে অনেক ভিএফএক্সের কাজ আছে। সেটার দায়িত্বে কাজ করছেন ইফতেখার চৌধুরী। এখন থেকে নয়, তিনি ছবির শুরু থেকেই যুক্ত আছেন। ছবি আমিই নির্দেশনা দিচ্ছি।

এর আগে গত ডিসেম্বর মাসের ২৫ দিন শুটিং করা হয় রামুজি ফিল্ম সিটিতে। সেই সময়ে পরিচালক রাশেদ রাহা তার কাজে নানা অনিয়ম করেন উল্লেখ করে সনেট বলেন, রাশেদ রাহা দাবী করছেন, শুটিং ৮০ কিংবা ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটাও মিথ্যে। সবকিছু বিশ্লেষণ করে দেখলাম শুটিং হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। ছবির জন্য যে বাজেট বরাদ্দ ছিল যেটা পুরোটাই ব্যয় করা হয়েছে এই  ক‘দিনে। ছবির জন্য মোট ৯০ টি সিন রয়েছে। কিন্তু ২৫ দিনে ৫৩ টি সিন করা হয়েছে। তার মানে প্রতিদিন ২ টি করে সিন করেছে।

সাকিব সনেট বলেন, সে (রাশেদ রাহা) কাজ তেমন করেনি। শাকিব ভাই আর নায়িকা ববি একটা পাঁচতারা হোটেলে থাকতো। সেখানে গিয়ে নায়ক-নায়িকার নাম ভাঙিয়ে সাত থেকে আট বার ‘স্পা’ করিয়েছে। পরে যা করার আমাকেই করতে হয়েছে। প্রডাকশনের যারা ছিল তারা সবাই জানে। গত দুইদিন ধরে আমি কলকাতায় শুটিং করেছি। দুইদিনে ১৩ টি সিনের কাজ করেছি। ঠিকভাবে কাজ করলে এতদিন আমার ছবির শুটিং শেষ হয়ে যেত। সে দেরি করায় আমার বাজেট বেশি খরচ হয়েছে। সে (রাশেদ রাহা) আমার ছবির জন্য সময় না দিয়ে নাটকের শুটিং করেছে। রামুজি থেকে ফিরে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আমাকে না জানিয়ে সে নাটক করেছে। ফোন বন্ধ থাকতো। আমি কোনো যোগাযোগ করতে পারতাম না। এটা আমার সহকারীরাও জানে।

তিনি বলেন, রামুজিতে সে ঠিকমত শুটিং করতো না। ঘুমাতো, ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ছবি তুলতো। এটা প্রতিটা শিল্পী জানে। বাজেট সেখানেই শেষ করে ফেলেছে। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে টাকা নিয়ে ‘আইফোন টেন’ কিনেছে। পারমিশনও নেয়নি। এটা প্রমাণ এবং সাক্ষী সবই আছে আমার কাছে। দেশে এসে বুঝলাম এভাবে সম্ভব না। তার মতিগতি ভালো না। তারপর জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে তাকে ডেকে একটি লিখিত নেই। সেখানে সে নিজে লিখিত দেয়, আমারও স্বাক্ষর আছে। বিভিন্ন শর্তে নিজ দায়িত্বে সে ‘নোলক’ শেষ করবে। যদি না করে সে টাকা ফেরত দেবে। তার সম্মানিও ফেরত দেবে। তার লিখিত কাগজ আমার কাছে আছে।

যোগ করে সনেট বলেন, রামুজিতে শুটিং এর সময় সবকিছু আমাকে দেখতে হতো। প্রতিটি শিল্পীর শিডিউলও আমাকে ম্যানেজ করতে হতো। আমি প্রযোজক হয়ে এসব কেন করলাম? তাহলে আর পরিচালকের দরকার কী? শুধু তাই নয়, শুটিং করতে গিয়ে তার সঙ্গে অনেকের ঝামেলা লাগতো। সে মদ খেয়ে একজনকে মারধরও করে।

তখন চুপ থেকে এতদিন পর রাশেদ রাহার বিরুদ্ধে কেন এসব অভিযোগ আনছেন? এমন প্রশ্নে সনেট আরো বলেন, আমার একটা পারিবারিক স্ট্যাটাস আছে। আমার পরিবার কেমন এটা অনেকেই জানে। এজন্য এসব ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাইনি। সেজন্য আমি চাইনি কোনো কাদা ছোঁড়াছুড়ি হোক। চেয়েছিলাম, সে তার ভুল শুধরে নিক। তাছাড়া সে যে কাজ জানেনা এটা আমি জানতাম না। কখন কাট, অ্যাকশন বলতে হয় এটা সে জানেনা। ক্যামেরায় যে ছিল তখন সে ঠিক করে দিত এসব।

শাকিব খান কিংবা সিনিয়র আর্টিস্টরা কিছু বলতেন না? প্রশ্নে তিনি বলেন, শাকিব খান তাকে প্রতিদিন এসব নিয়ে কথা শুনাতো। আমাকে অনেকবার বলেছে, বাঁদরের গলায় মুক্তার মালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। এতসুন্দর একটা প্রজেক্ট কাকে দিলে তুমি! আমি শাকিব ভাইকে বলতাম, ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুই হলো না। শেষে বুঝলাম আমার টাকা পয়সাগুলো নষ্ট হবে।

সাকিব সনেট বলেন, আমরা ‘নোলক’ মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম এপ্রিল মাসে, বৈশাখ উপলক্ষে। শাকিব ভাই নিজেও বারবার ডাকতো। কেন আসছো না, আমার থেকে ডেট কেন নিচ্ছো না। তার সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। সে সাড়া দেয়নি। ফোন রিসিভ করতো না। তার সঙ্গে কতোবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, মেসেজ দিয়েছি পাত্তা দেয়নি। সব প্রমাণ আছে আমার কাছে।
এদিকে শেষ লটে এসে ‘কেন ‘নোলক’-এর পরিচালনা থেকে বাদ গেলেন? এবং অন্য পরিচালক দিয়ে কেন শুটিং করা হচ্ছে? এ নিয়ে নির্মাতা রাশেদ রাহা একটি অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে। রবিবার বিকেলে লিখিতভাবে অভিযোগপত্রটি জমা দেন তিনি।

পরিচালক সমিতিতে জমা দেয়ার পর চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে আসে রাশেদ রাহার লিখিত অভিযোগটি। সেখানে রাশেদ রাহা বলেছেন, ‘নোলক’ ছবির বাকি অংশের শুটিং করার জন্য আমি অনেকদিন থেকেই প্রস্তুত। কিন্তু মাস খানেক আগে এই ছবির পরিচালক সাকিব ইনতেজার চৌধুরী (সনেট) এর পক্ষ থেকে বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য পরিচালক ইফতেখার চোধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বলা হয়। ছবির নির্মাণ কৌশল ও গোপনীতাবজায় রাখার স্বার্থে কারো সঙ্গে পরামর্শ করতে আগ্রহী ছিলাম না।

একটি সিনেমা একজন নির্মাতার কাছে তার সন্তানতুল্য উল্লেখ্য করে রাশেদ রাহা বলেন, নোলক আমার প্রথম চলচ্চিত্র। এই ছবি নিয়ে মিশে আছে আমার স্বপ্ন। পরিচালকের কাছে তার প্রথম ছবি সন্তানতুল্য। সৃষ্টি হারানোর আশঙ্কায় আমি মাসনিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি নিয়মিত ছবি পরিচালনা করতে চাই। তাই সম্মানিত স্পরিচালক সমিতি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।