মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) সনাক্ত করে এবছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন লিগোর (লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্রাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি) তিন বিজ্ঞানী রাইনার উইস, কিপ এস থর্ন, ব্যারি সি ব্যারিশ। এই নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানী রাইনার উইস এবং বাকি অর্ধেক পেয়েছেন মার্কিন দুই বিজ্ঞানী কিপ এস থর্ন এবং ব্যারি সি ব্যারিশ।
দুটো কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে জন্ম নেয়া মহাকর্ষীয় তরঙ্গরা সব সময়ই আমাদের আশেপাশে আছে। ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময় সৃষ্ট হওয়া এসব তরঙ্গ আমাদের এখানে আসছে। তবে এসব তরঙ্গ খুবই দুর্বল। এরা সাধারণত বস্তুর সঙ্গে কোনো মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। ফলে আমরা তাদের অনুভব করতে পারছি না।
লিগোর বিজ্ঞানীরা যে মহাকর্ষ তরঙ্গ সনাক্ত করেছেন তাদের প্রায় তিনটি সূর্যের সমান ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে জন্ম। কিন্তু এর সম্পর্কে আমরা বলতে গেলে তেমন কিছুই জানি না। তাই এর শক্তিকে কাজে লাগানোর উপায়ও এখন পর্যন্ত জানতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।
লিগো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কারের কথা ঘটা করে ঘোষণা দিয়েছে ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। তবে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হচ্ছে ‘বিজ্ঞানের বড়দিন’, যেদিন জার্মানিতে গবেষণাকালে লিগোর ইতালীয় বিজ্ঞানী মার্কো ড্রাগো এই তরঙ্গ প্রথম অবলোকন করেন।
বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক ও আকর্ষণীয় পুরস্কার নোবেল ঘোষণা শুরু হয়েছে ১ অক্টোবর সোমবার থেকে।
নোবেলপ্রাইজ ডট অর্গ জানিয়েছে, এ বছর নোবেল পুরস্কারের পর্দা উঠেছে সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞান বা মেডিসিনে বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এরপর মঙ্গলবার দেওয়া হয় পদার্থবিজ্ঞান নোবেল। বুধবার রসায়ন ও শুক্রবার শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম। আগের মতোই নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে পরে।
বাংলাদেশ থেকে একমাত্র নোবেল পুরস্কার পাওয়ার গর্ব রয়েছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পান। বাঙালিদের মধ্যে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে সাহিত্যে এবং অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পান।
এছাড়া নোবেল কর্তৃপক্ষ থেকে প্রকাশিত দলিল থেকে জানা যায়, ১৯০১ থেকে ১৯৬৬ সাল- এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের দুই বিজ্ঞানীর পক্ষে অন্যরা নোবেলের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন। অবশ্য তখন বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র নয়, ফলে ওই বিজ্ঞানীরা ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। এদের একজন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। তার পক্ষে মোট সাতবার মনোনয়ন জমা পড়ে। ১৯৩০ সালে দেবেন্দ্র বোস ও শিশির মিত্র মনোনয়ন পাঠান। ১৯৩৮ ও ১৯৪০ সালে দুইবার মেঘনাদের পক্ষে মনোনয়ন জমা দেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আর্থার কম্পটন। শিশির মিত্র ১৯৩৯, ১৯৫১ ও ১৯৫৫ সালে আরও তিনবার মেঘনাদের পক্ষে মনোনয়ন দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পক্ষে মনোনয়ন জমা পড়ে চারবার। ১৯৫৬ সালে কে ব্যানার্জি, ১৯৫৯ সালে ডি কোথারি, ১৯৬২ সালে এস বাগচি এবং একই বছর এ দত্ত বসুর পক্ষে মনোনয়ন দেন।
১১৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে নোবেলজয়ী ব্যক্তি হচ্ছেন মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানের নারীশিক্ষা আন্দোলনের এই অগ্রদূত ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভারতের শিশু অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা কৈলাস সত্যার্থির সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পান।
লিওনিড হারভিচ হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বয়সে নোবেলজয়ী ব্যক্তি। তিনি ২০০৭ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।
২০১৬ সাল পর্যন্ত ২৬টি প্রতিষ্ঠান ও ৮৮৫ জন ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪৯ জন।
সুইডিশ রসায়নবিদ আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসারে ১৯০১ সাল থেকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, মেডিসিন, শান্তি ও সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।