চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নোবেল অধরাই রয়ে গেল তার

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পর সেরা পদার্থবিদের মর্যাদা পেলেও কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পুরস্কার আর পাওয়া হলো না স্টিফেন হকিংয়ের। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন তিনি।

মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্যের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় কৃষ্ণবিবর বা কৃষ্ণগহ্বর ও বিকিরণ তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর স্থান দখল করে আছেন স্টিফেন হকিং। বিশ্বখ্যাত এই পদার্থবিদ ছাড়া আইনস্টাইনের গবেষণাকর্ম আর তত্ত্ব বিশ্লেষণের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আর কাউকে এ পর্যন্ত মর্যাদা দেয়া সম্ভব হয়নি।

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে দেয়াকে হকিংয়ের অন্যতম সেরা কাজ বলা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে নোবেল সম্মাননার যোগ্য তিনি নিশ্চয়ই।

কিন্তু নোবেল পুরস্কারের জন্য নিয়ম অনুসারে শুধু তাদেরকেই নির্বাচিত করা হয় যার কাজ মানবজীবনে বা মানব সেবায় কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। আর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল তাদের মধ্য থেকে কাউকে দেয়া হয়, যিনি যুগান্তকারী কোনো আবিষ্কার বা উদ্ভাবন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

স্টিফেন হকিংই সর্বোৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা দেন কৃষ্ণবিবরের। দাবি করেন, আইনস্টাইনের কৃষ্ণবিবর ও এর ‘ইভেন্ট হরাইজন’ বা ‘ঘটনা দিগন্ত’ বিষয়ক তত্ত্বে ত্রুটি আছে। আইনস্টাইন ১৯১৬ সালে তার সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মাধ্যমে প্রথম কৃষ্ণবিবরের উপস্থিতির তাত্ত্বিক অনুমান তুলে ধরে বলেন, কৃষ্ণবিবর এমন এক জিনিস, যার তীব্র মাধ্যাকর্ষণ বল থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না।স্টিফেন হকিং-নোবেল

কিন্তু হকিং তার তত্ত্বের মাধ্যমে দেখান, কৃষ্ণবিবর আদতে কৃষ্ণ নয়। অনবরত সেখান থেকে আলোর গতিতে বের হয়ে আসছে কণা স্রোত। হকিংয়ের নামানুসারে এই কণাস্রোতের নামও দেয়া হয় হকিং বিকিরণ।

তবে এই প্রমাণ শুধুই তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে হয়েছে। বাস্তবে এর সত্যতা প্রমাণের মতো প্রযুক্তি এখনো নেই মানুষের হাতে। তাই যতক্ষণ না পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছিল স্টিফেন হকিংয়ের তত্ত্বটি সত্যি, ততক্ষণ নোবেল পাওয়া সম্ভব ছিল না তার জন্য।

আশা করা হচ্ছিল, আর ৫/১০ বছরের মধ্যে হয়তো সেই প্রযুক্তিটি মানুষ আবিষ্কার করে ফেলবে এবং তখন পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষাগারে মাইক্রো ব্ল্যাক হোল তৈরি করে এর চরিত্র পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ ৮০ বা তার বেশি বয়সের মধ্যে পরীক্ষা সফল হলে হকিং নিশ্চিতভাবেই পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলটা জিতে নিতেন।স্টিফেন হকিং-নোবেল

কিন্তু সেটা আর হলো না।

ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তি এলে হয়তো হকিংয়ের তত্ত্ব পরীক্ষা করে তা সত্য প্রমাণিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু তখনো তিনি সেই নোবেলের ভাগীদার হবেন না। নোবেল তখন যাবে যিনি তত্ত্বটি প্রমাণ করতে সফল হবেন তিনি। কেননা মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার দেয়ার নিয়ম নেই।

বুধবার সকালে ৭৬ বছর বয়সে ক্যামব্রিজে নিজ বাসভবনে বিশ্বখ্যাত এই পদার্থবিদ মৃত্যুবরণ করেন। তার পারিবারিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।