অর্থনীতিতে নৈতিকতার সংকটের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটউটে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তিন দিনব্যাপী ২০তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রেহমান সোবহান বলেন: বর্তমানে অর্থনীতিতে নৈতিকতার প্রকট সংকট রয়েছে। এটি একটি চিহ্নিত সমস্যা। আর এই সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ব্যাংকিং খাতে। এর প্রভাব পড়ছে সার্বিক অর্থনীতিতে। তাই সুষম উন্নয়ন, রাজনৈতিক সমতা ও গণতন্ত্রের জন্য নৈতিকতা অত্যন্ত জরুরি।
সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন: নৈতিকতার সঙ্গে অর্থনীতি যুক্ত করতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য দূর করা সম্ভব।
তিনি বলেন: আমরা যদি অর্থনীতিকে শুধুমাত্র মুনাফা ভিত্তিক করি বা মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি, সেটা শুধুমাত্র মুনাফা ও লোকসানের মধ্যেই থেকে যাবে। তবে অর্থনীতি ও নৈতিকতার সংমিশ্রণ ঘটাতে সক্ষম হলে বৈষম্য দূর করা সম্ভব। তাই এ বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা ও নীতি প্রয়োজন।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন: বিশ্ব অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায় উন্নত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট। কিন্তু সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রায় অর্থনীতির বৈষম্যের বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তবে বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শোষণমুক্ত সমাজ ও দারিদ্র্য বিমোচন করতে আমাদের সবার অর্থনীতির সঠিক পথটি নির্ধারণ করতে হবে। ঠিক করতে হবে কী করতে চাই এবং কী করতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে কী ধরনের সংস্কার ও নীতির প্রয়োজন সেটা ঠিক করতে হবে। এজন্য সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
স্পিকার বলেন: অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন, গণতন্ত্র নিশ্চিত ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। এজন্য বাধাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সক্ষমতা ও সুযোগের সমন্বয় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন: প্রচলিত অর্থশাস্ত্র সমাজ ও রাষ্ট্রের জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই অনার্স ও মাষ্টার্স পর্যায়ে অর্থনীতির পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন: অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে আবদ্ধ থাকলেই চলবে না- বরং তাদেরকে নীতি দর্শন, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও রাজনীতি সম্পর্কেও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।