নেইমার, কাইলিয়ান এমবাপে, এডেন হ্যাজার্ড, হ্যারি কেন, সাদিও মানে, ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন, পল পগবা, মাউরো ইকার্দি… এই নামগুলোর সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের যোগাযোগের কানাঘুষা দিনদিন বাড়ছেই। দেখে মনে হতে পারে পরিস্থিতি রিয়ালের আওতাতেই আছে। কিন্তু বাস্তবতা হল লস ব্লাঙ্কোসদের জন্য একজন স্বপ্নের খেলোয়াড়ের হাহাকারটা দিনকে দিন বাড়ছেই।
দশ বছরে প্রথমবারের মতো এমন একজন খেলোয়াড়ের সন্ধানে নেমেছে রিয়াল যিনি কেবল মানসম্পন্নই হবেন না, একই সঙ্গে হবেন ভবিষ্যতের কাণ্ডারিও। ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের দরকার একজন ‘ফ্র্যাঞ্চাইজ খেলোয়াড়ের’ যিনি সমানে পাল্লা দিতে পারবেন লিওনেল মেসির সঙ্গে। আর সেই যোগ্যতাসম্পন্ন দুজন খেলোয়াড়ের একজনকে পেতে দুহাত ভরে অর্থ ঢালতে রাজী রিয়াল সভাপতি- খেলোয়াড়টি হতে পারেন নেইমার কিংবা এমবাপে!
মূলত ছয় শ্রেণিতে ভাগ করে খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো ঠিক করে রিয়াল। সবার নিচে হল অ্যাকাডেমি থেকে বের হয়ে আসা ফুটবলাররা, এদের বলা হয় ক্লাবের নিজস্ব খেলোয়াড়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়েন উদীয়মান ফুটবলাররা, যাদের ভাবা হয় ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে। ভিনিসিয়াস জুনিয়র যেমন এই শ্রেণিতে আছেন।
তৃতীয় শ্রেণিতে তারা আছেন যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের নামকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। ভালো খেলার নিশ্চয়তাও এদের কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব। আর এদেরই একধাপ আছেন যারা আন্তর্জাতিক ফুটবলে নাম কামিয়েছেন, ক্লাবের নাম উজ্জ্বল করতেও এরকম খেলোয়াড়দের চাহিদা আছে রিয়ালে।
শেষ শ্রেণির আগের ধাপে যারা আছেন তারা এরইমধ্যে অভিজাত ফুটবলার হিসেবে নাম তালিকাভুক্ত করে ফেলেছেন। নিজেদের পজিশনে এরা রীতিমত বিশ্বসেরা। আর ষষ্ঠ শ্রেণির ফুটবলারদেরকে রিয়ালে বলা হয় ‘ফ্র্যাঞ্চাইজ ফুটবলার’। দলের মূল পরিকল্পনায় কেন্দ্রে থাকেন এরা, থাকেন কোচের সার্বক্ষণিক ভাবনায়। আক্রমণ থেকে শুরু করে সবকিছু আবর্তিত হয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজ খেলোয়াড়দের ভিত্তি করে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছিলেন প্রকৃত অর্থে রিয়ালের ফ্র্যাঞ্চাইজ খেলোয়াড়। পর্তুগিজ মহাতারকার জুভেন্টাসে চলে যাওয়ার পর নয় মাস ধরে এই শূন্যস্থানটা পূরণ করতে পারেননি কেউ। গ্যারেথ বেলকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওয়েলস ফরোয়ার্ড নিজের নামের প্রতি অবিচার করে পড়ে আছেন পঞ্চম শ্রেণিতেই। এমনকি রোনালদোর বিকল্প হিসেবে যাকে আনতে চায় রিয়াল সেই হ্যাজার্ডও খেলার বিবেচনায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন না। তাই একজন ফ্র্যাঞ্চাইজ খেলোয়াড়ের বড্ড অভাবে ভুগছে লস ব্লাঙ্কোসরা।
রোনালদোর অভাব পূরণ করার মতো যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকায় রিয়াল সভাপতি চান পিএসজি থেকে নেইমার অথবা এমবাপে দলে নিয়ে আসতে। সম্ভব হলে দুজনকেই। তবে রিয়ালকে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়তে হতে পারে তাকে চাইলে নাম দেয়া দেয়া যেতে পারে ‘কাতারি সমস্যা’! কারণ গুঞ্জন আছে নেইমার-এমবাপেকে দলে টানতে অর্থ ঢেলেছেন স্বয়ং কাতারের আমির। অর্থাৎ, পিএসজি মালিক নাসের আল-খেলাফি ইচ্ছে করলেও বিক্রি করতে পারবেন না দুই তারকাকে।
একটা সময় রোনালদোর বিকল্প ভেবে নেইমারকেই খুব করে মাদ্রিদে আনতে চাইতেন পেরেজ। এজন্য একাধিকবার ব্রাজিলিয়ান তারকার বাবার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন তিনি। ফেলেছেন অর্থের তোপ। কূটনীতি করে চেয়েছেন পিএসজিকে ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে-র নিষেধাজ্ঞায় ফেলতে। কিন্তু দুবছর ধরে অনেক শঙ্কা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ঠিকই নেইমারকে ধরে রেখেছে প্যারিসের ক্লাবটি।
তবে বর্তমানে পেরেজের নেইমার প্রীতি অনেকটাই কমে এসেছে বলা চলে। সেই জায়গাটা নিয়েছেন এমবাপে। বিশেষ করে টানা দুই মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পিএসজিকে বিপদে ফেলে নেইমারের চোট দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে রিয়াল সভাপতির। মাদ্রিদের কর্মকর্তারাও সভাপতিকে বোঝাতে পেরেছেন যে, এমবাপের বয়স মাত্র ২০। ভবিষ্যতে লম্বা সময় রিয়ালকে অনেক কিছুই দেয়ার আছে ফরাসি বিস্ময় বালকের। এরইমধ্যে এমবাপের নামের পাশে যোগ হয়েছে বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ডের তকমাও। রিয়ালের জন্য যা হবে সোনায় সোহাগা। আর জিদানের কৌশলের সঙ্গে ভালোভাবেই কিন্তু মানিয়ে যায় এমবাপের খেলার ধরণ।
অন্যদিকে নেইমারের বয়স চলছে ২৭। এমবাপের মতো বেশীদিন ‘সার্ভিস’ দেয়ার সামর্থ্য নেই ব্রাজিলিয়ান তারকার। তারওপর নেইমার চোটপ্রবণ। এজন্য নেইমার চিন্তা থেকে সরে এসে এমবাপের দিকেই ঝুঁকে পড়েছে রিয়াল। প্রয়োজনে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ইউরো ঢালার প্রস্তুতিও নাকি সেরে ফেলেছেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। পাঁচ বছর আগে বালক অবস্থায় যেই এমবাপেকে দলে টানতে পারেনি মাদ্রিদের জায়ান্টরা, সবকিছু ঠিক থাকলে সামনের মৌসুমেই পূরণ হতে পারে সেই আক্ষেপ!