মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস শামস জগলুল হোসেন অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরু হলো।
বুধবার দুপুর ২টায় ওসি মোয়াজ্জেমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তার পক্ষে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের শুনানি শেষে মোয়াজ্জেমের আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে ওসি মোয়াজ্জেমকে দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল আগামী ৩১ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।
গত ১৬ জুন হাইকোর্ট থেকে বের হওয়ার পর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সোনাগাজী থানা পুলিশ ওসিকে ১৭ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির করেন। ওই দিন মোয়াজ্জেমের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলে ওই আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ৯ জুলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ওই দিন বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে সকালে মোয়াজ্জেমকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়।১৭ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস শামস জগলুল হোসেন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করেন। এর আগের দিন ১৬ জুন শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে সোনাগাজী সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন।এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন।
মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তার মা বাদী হয়ে মাদ্রসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে।
এ মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাফি ও তার পরিবারের উপর চাপ প্রয়োগ করে অধ্যক্ষের লোকজন। এতে ব্যর্থ হয়ে গত ৬ এপ্রিল রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে কৌশলে মাদ্রসার ছাদে ডেকে নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামীরা চাপ দেয়। পরে পরিকল্পিতভাবে রাফির হাত পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে নুসরাত জাহান রাফি অগ্নিদগ্ধ হয়।
তাকে প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল রাতে রাফি মারা যায়।