দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে স্নাতকোত্তর শেষ করলেও নির্মম নিয়তির কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হচ্ছে রোমানা খাতুনের (২৪)।
অল্প বয়সে দুটি কিডনিই বিকল হওয়ায় স্বপ্ন ভেঙে খানখান মেয়েটির। সপ্তাহে দুদিন কিডনি ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে তার শরীরের রক্ত পরিশোধন চলছে। ডায়ালাইসিস নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। চিকিৎসা আর ডায়ালাইসিসের খরচ জোগাতে পরিবার নিঃস্ব প্রায়। চিকিৎসকেরা দ্রুত মেয়েটিকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন।
ছোটবেলা থেকে অভাবের সঙ্গে লড়াই করা রোমানা কখনো হারেননি। এইচএসসি পাসের পর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন বগুড়ার সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে। অভাবের মধ্যেই মেসে থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
স্নাতকোত্তর পরীক্ষার আগেই বাবা হাবিবুর রহমান মারা যান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির অবর্তমানে দুই ভাইবোনের পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয়। সংসার আর পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা রওশন আরা। বাবা হারানোর ভাগ্যবিপর্যয় আর অভাবের কাছে তবুও হার মানেননি। অভাবের সঙ্গে লড়াই করেই মায়ের কষ্টে জোগানো টাকায় পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।
অভাব আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে স্নাতকোত্তর শেষ করলেও নির্মম নিয়তির কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হচ্ছে তাকে। অল্প বয়সে দুটি কিডনিই বিকল হওয়ায় স্বপ্ন ভেঙে খানখানতার। চাকরির বদলে সপ্তাহে দুদিন কিডনি ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে তার শরীরের রক্ত পরিশোধন চলছে। ডায়ালাইসিস নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
চিকিৎসা আর ডায়ালাইসিসের খরচ জোগাতে পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব। চিকিৎসকেরা দ্রুত মেয়েটিকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ জোগানোর সামর্থ্য নেই পরিবারের। পরিবারের কারও সঙ্গে টিস্যু ম্যাচ না করায় মিলছে না কিডনিও।
রোমানা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন, কিন্তু অর্থাভাব আর হতাশা-নিরাশায় ক্রমেই সেই স্বপ্ন ক্ষীণ হয়ে আসছে।
এখন মেয়েটির চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া—সবকিছুই সীমিত, কাজ করতে পারেন না, দূরে কোথাও যেতে পারেন না। সব সময় অসুস্থতা অনুভব করেন।
রোমানা খাতুনের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের দামগাছা গ্রামে। বগুড়া শহরে মেসে থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি। সপ্তাহে দুদিন বাড়ি থেকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলোজি বিভাগে এসে ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে।
রোমানা খাতুন বলেন, ‘স্নাতকোত্তর পাসের পর চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, কিডনির সমস্যা। গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি জানান, দুটি কিডনিই বিকল। দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিডনি প্রতিস্থাপন না করা পর্যন্ত তিনি ডায়ালাইসিস নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর কয়েক মাস ধরে চলছে ডায়ালাইসিস নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা। সপ্তাহে দুদিন ডায়ালাইসিস নিতে হয়। দু-এক দিন দেরি হলেই সিরাম ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।’
ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইমরান হোসেন বলেন, ‘পরিবারের দু-একজন কিডনি দিতে চান। কিন্তু রক্তের গ্রুপ ও টিস্যু মিলছে না। সহজে কিডনিদাতাও মিলছে না। তা ছাড়া কিডনি প্রতিস্থাপন করতে ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা দরকার। সেই অর্থ জোগানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। ২৪ শতকের একখণ্ড জমি আর বসতঘরটুকু সম্বল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপাকে বাঁচাতে সংসারের সর্বস্ব বিক্রি করতে হয়েছে। এখন আমার পড়াশোনার ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। আপা বাঁচতে চান। পৃথিবীকে উপভোগ করতে চান। আমাদের সামর্থ্য নেই। কেউ যদি আপাকে বাঁচাতে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতেন, তবে আমার আপা বেঁচে যেতেন।’
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা
মো. ইমরান হোসেন, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ০৩৪৩৪০০২৩৫৭, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, বগুড়া শাখা। বিকাশ ০১৪০৮৬৭৭০৮৩।