ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়ম ভাঙা তথা, আর্থিক অনিয়মের জেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগামী দুই মৌসুম থেকে ম্যানচেস্টার সিটিকে নিষিদ্ধ করেছে উয়েফা। একইসঙ্গে ক্লাবটিকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে জায়ান্ট ক্লাবটি। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে আর্থিক অনিয়মের জন্য ম্যানসিটির বিপক্ষে তদন্ত শুরু করে উয়েফা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা না থাকলে, না খেললে কী কী প্রভাব পড়বে ইউরোপিয়ান ফুটবলে? ম্যানসিটিও কী বসে থাকবে এই সময়টাতে?
ক্রীড়া আদালত কী পারবে ম্যানসিটির নিষেধাজ্ঞা কমাতে?
ম্যানসিটি এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা তাদের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আপিল করতে চলেছে দ্রুতই। আপিলে কাজ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। দুই দলবদলে খেলোয়াড় কেনার উপর নিষেধাজ্ঞা পাওয়া প্রিমিয়ার লিগের আরেক দল চেলসি তাদের শাস্তি কমিয়ে এক দলবদল করে দিয়েছিলো এই ক্রীড়া আদালতই। ম্যানসিটিকে যা করার করতে হবে ২০২০/২১ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগেই। এরমধ্যে না হলে সিটিজেনদের চেষ্টা থাকবে নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের। আর যদি ক্রীড়া আদালতে ব্যর্থ হয় ম্যানসিটি তাহলে নিয়মিত আদালতেও আপিল করার সুযোগ থাকছে। ২০১১ সালে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করেই ইউরোপা লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছিলো সুইস ক্লাব সিয়ন।
অবশ্য এতদূর না দেখলেও চলতো। ইদানীংকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরণ ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ইউরোপা লিগে দুই মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলো সাতবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলটি। ক্রীড়া আদালতে আপিলের পর তা কমে দাঁড়িয়েছে এক মৌসুমে।
এই নিষেধাজ্ঞায় কী ধরনের প্রভাব পড়বে প্রিমিয়ার লিগে?
ম্যানসিটির নিষেধাজ্ঞায় খুব একটা প্রভাব পড়ার কথা নয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নিয়ম অনুযায়ী স্পেন, ইংল্যান্ড, ইতালি ও জার্মানির লিগের সেরা চারদল খেলার সুযোগ পায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। প্রশ্ন উঠতে পারে ম্যানসিটি যদি সেরা চারে থাকে তখন কী হবে? উত্তরটা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে সুযোগ পাবে লিগের পঞ্চম স্থানে থাকা দলটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে দলটা প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা হারাবে তাদের বদলি হিসেবে একই লিগের পরের সেরা দলটাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারবে।’
যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই যায় ম্যানসিটি তবে কী হবে?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মূলত এটাই। যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই যায় ম্যানসিটি তাহলে তো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তো তাদের পরের মৌসুমে এমনিই খেলার কথা! কী হবে এমন হলে? তবে এই প্রশ্নেরও উত্তর আছে যা হতাশ করবে সিটিজেন ভক্তদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে ‘চ্যাম্পিয়ন দল খেলতে না পারলে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপে খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রানার্সআপ দলটি।’ অর্থাৎ, পরের মৌসুমে খেলা তো দূরের কথা ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপেও অংশ নেয়ার সুযোগ হবে না ক্লাবটির।
নিষেধাজ্ঞার সময় খেলোয়াড় কিনতে পারবে সিটিজেনরা?
কম বয়সী খেলোয়াড় কিনে দলবদলে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলো চেলসি, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মত ক্লাবগুলো। ম্যানসিটির নিষেধাজ্ঞার ধরণ এদের থেকে আলাদা। তাত্ত্বিক ভাবে, খেলোয়াড় কেনার ব্যাপারে কোন কড়াকড়ি থাকছে না সিটির উপর। তবে ইউরোপা লিগে যখন নিষিদ্ধ হয় যখন এসি মিলান তখন তাদের স্কোয়াড ২৫ জন থেকে কমিয়ে ২১ জন নামিয়ে আনার আদেশ দিয়েছিলো উয়েফা। ম্যানসিটির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম থাকছে কিনা সে বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
কতটা প্রভাব পড়বে ম্যানসিটির আয়ে?
চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার কারণে ৮০ থেকে ১১০ মিলিয়ন ইউরো আয় করবে সিটিজেনরা। যদি দুই মৌসুম খেলতে না পারে ক্লাবটি সেক্ষেত্রে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি আয় হবে না ক্লাবটির। সবচেয়ে বড় সমস্যা ইউরোপিয়ান আসরে খেলতে না পারলে পৃষ্ঠপোষক ও আন্তর্জাতিক ট্যুর গুলো থেকেও আয়ের সুযোগ থাকছে না তাদের।
তাদের খেলোয়াড়দের কী ধরে রাখতে পারবে ক্লাবটি?
যদি বড় আসরে নাই খেলতে পারে ম্যানসিটি তবে তারকা ফুটবলারদের কীভাবে ধরে রাখবে ক্লাবটি? চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্ন দেখিয়ে কীভাবেই বা খেলোয়াড়দের দলে টানবেন কোচ পেপ গার্দিওলা? আর তিনি নিজেই বা ম্যানচেস্টারে থাকবেন কিনা সেটাও এখন বড় প্রশ্ন! বর্তমানে ১৯ জন খেলোয়াড় আছেন ম্যানসিটিতে যাদের সঙ্গে ২০২২ সাল পর্যন্ত চুক্তি আছে ক্লাবটির। এই ১৯ খেলোয়াড়ের মাত্র ৯ জন আছেন মূল দলে, বাকিরা খেলছেন ধারে। নিকোলাস ওটামেন্ডির সঙ্গে ২০২১, ফার্নান্দিনহো ও সার্জিও আগুয়েরোর সঙ্গে ২০২২ পর্যন্ত চুক্তি ক্লাবটির। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে না খেললে এই খেলোয়াড়দের ধরে রাখাই কঠিন। রাহিম স্টার্লিং, কেভিন ডি ব্রুইন, বার্নাডো সিলভাদের মত তরুণরাও যে পরের দুই মৌসুম ম্যানসিটিতে থাকবেন তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?