দিল্লির নির্ভয়া ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া চার আসামির একজন ‘নিষ্পাপ বালক ছিলাম’ দাবি করে অপ্রাপ্তবয়সের যে পিটিশন করেছিল তা খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
সোমবার আসামি পবন গুপ্তের করা পিটিশন খারিজ করে দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এর ফলে ১ ফেব্রুয়ারি ওই চার আসামির ফাঁসি কার্যকরের রায় বহাল থাকলো।
পিটিশন খারিজের সময় আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়: অপ্রাপ্তবয়সের দাবিটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আর কোনো দাবি উঠবে না। আর কতবার নিজের নাবালকত্ব প্রমাণ করবে?
এর আগে দিল্লি হাইকোর্টে পবনের ওই দাবির আবেদন খারিজ হয়ে যায়। সেখানেও তার আবেদন ছিল, ঘটনার সময় সে প্রাপ্তবয়স্ক ছিল না। তাই অন্যদের সমান শাস্তি তার জন্য নয়।
এরপর পবন আবেদন জানায় শীর্ষ আদালতে।
দিল্লির সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, বিচারের প্রত্যেক ধাপে পবন ক্রমাগত নিজেকে নাবালক প্রমাণে মরিয়া। এভাবে বারবার তাকে সুযোগ দেওয়া হলে ন্যায়বিচার প্রহসনে পরিণত হবে। অন্যায় হবে নির্ভয়ার সঙ্গে।
তিনি আরও দাবি করেন, যেভাবে অত্যাচার করে মেরেছে নির্ভয়াকে তাতে একবারও কি মনে হয় পবন নাবালকের মতো কাজ করেছে?
তবে নির্ভয়া কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ছয় অপরাধীর একজন এর আগে নিজের নাবালকত্ব প্রমাণ করে তিন বছর সংশোধনাগারে কাটিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। সেসময়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছিল গোটা দেশ।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন প্যারা মেডিক্যালের এক শিক্ষার্থী। প্রেমিকের সামনেই গণধর্ষণের শিকার হন ভারতব্যাপী ‘নির্ভয়া’ নামে পরিচিতি পাওয়া ওই নারী। দু’জনকেই মারধরের পর বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। ওই বছরই ২৯ ডিসেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নির্ভয়ার।
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২১ ডিসেম্বর আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করা হলে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পাঁচ প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়। ওই বছরের ১১ মার্চ তিহার জেলে মূল আসামি রাম সিং আত্মহত্যা করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক আরেক আসামিকে তিন বছর জেল খাটার পর মুক্তি দেয়া হয়।
পরে ২৩ সেপ্টেম্বর অন্য চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখেন দিল্লি হাইকোর্ট। পরে সুপ্রিমকোর্টে এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি। ২০১৭ সালের ৫ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।
২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় আসামি অক্ষয় কুমার সিং। ১৬ ডিসেম্বর রায় পুর্নবিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করা হয়।
অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর অক্ষয় ঠাকুর সিং, মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মা– এই চার আসামিরই মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর সর্বোচ্চ সাজা থেকে রেহাই পাওয়ার সর্বশেষ উপায় হিসেবে আসামি বিনয় ও মুকেশের দায়ের করা কিউরেটিভ পিটিশন গত ১৪ জানুয়ারি খারিজ হয়ে যায়। তাদের ফাঁসি ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার জেলে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অন্তত ১৪ দিন সময় দিতে হয় অপরাধীদের। সেই নিয়মেই ২২ তারিখ চার জনকে ফাঁসি দেয়া যাবে না।
সময় পেয়ে কিউরেটিভ পিটিশনে ব্যর্থ হওয়া মুকেশ আলাদা করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ প্রাণভিক্ষার আবেদন ফিরিয়ে দেন।
এরপরই সাজা কার্যকরের তারিখ পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টা নির্ধারণ করে মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন আদালত। নতুন পরোয়ানা অনুযায়ী শুক্রবার থেকে ১৪ দিনের শর্ত কাটায় কাটায় পূরণ হচ্ছে।