ভারতে চলন্ত বাসে নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অক্ষয় সিংয়ের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
বুধবার অক্ষয় সিংয়ের করা আবেদন ভারতীয় শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করে দেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পর আসামীদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের আগে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ব্যতীত আর কোনো বাধা রইলো না। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের জন্য আসামিরা মাত্র এক সপ্তাহ সময় পাবেন।
অক্ষয় সিংয়ের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা এবং রায় পুনর্বিবেচনা প্রসঙ্গে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন: দোষী কোনোভাবেই ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। ঈশ্বরও এ জাতীয় দানব তৈরি করতে লজ্জা বোধ করবেন। এমন কিছু অপরাধ থাকে যেগুলো দেখে মানবতাবাদও মাথা খুঁড়ে মরে এবং এই মামলাটি তারই একটি।
২০১২ সালে দিল্লিতে ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। সেই মামলায় দোষী পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে অক্ষয় সিং নামের অন্যতম দোষী নিজের মৃত্যুদণ্ডের রায় পর্যালোচনার জন্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়।
অক্ষয় সিংয়ের আইনজীবী রায় পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে যুক্তি দেখান যে, এই মামলায় সিবিআই তদন্তের দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত সিবিআই তদন্ত হয়নি। তিনি গুরুগ্রামে ২০১৭ সালের হত্যা মামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘গুরুগ্রামের স্কুল মামলায় সিবিআই তদন্ত হয় এবং দেখা যায় যে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্ত বাস কন্ডাক্টরকে ক্লিন চিট দেয় সিবিআই।’
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে আসামি অক্ষয় সিংয়ের পক্ষ নিয়ে তার আইনজীবী বলেন: তাকে ওই মামলায় জোর করে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং এর থেকেই ‘প্রকৃত অপরাধীদের’ ধরার ক্ষেত্রে সরকারের অদক্ষতা প্রমাণ হয়।
আইনজীবী বলেন, নির্ভয়ার মৃত্যুকালীন জবানবন্দির উপর পুরোপুরি ভরসা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি তিহার জেলের প্রাক্তন জেলারের সাম্প্রতিক বইয়ের দিকেও ইঙ্গিত করেন। ওই বইটিতে কারাবন্দি অবস্থায় নির্ভয়াকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত রাম সিংয়ের আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তিহার জেলেই বন্দি রয়েছে দিল্লি গণধর্ষণ মামলার দোষীরা।
তখন ভারতের শীর্ষ আদালত বলেন, আমরা কোনও লেখকের মতামত অনুসারে যেতে পারি না। কোনও বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে যদি কেউ বই লেখা শুরু করে এবং এই জাতীয় কথা বলে তবে এটা একটা বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যাবে। এই ধরণের যুক্তি শুনতে হলে কোনও দিনই কোনও মামলা শেষ হবে না।বিচারের সময়ই তার এসব কথা বলা উচিত ছিল।
প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে নির্ভয়া মামলার রায় পুনর্বিবেচনার এই মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় বিচারপতি আর ভানুমথি, অশোক ভূষণ ও এএস বোপান্নার বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়।
অক্ষয় সিংয়ের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখার প্রসঙ্গে নির্ভয়ার মা আশা দেবী বলেন, তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে ওই দোষীর আবেদন বাতিল হবে এবং খুব তাড়াতাড়িই ৪ দোষীকে ফাঁসি দেওয়া হবে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত অন্য তিন আসামি মুকেশ (৩০), পবন গুপ্ত (২৩) এবং বিনয় শর্মা (২৪) এর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন এর আগে খারিজ হয়ে গেছে। নির্ভয়ার ধর্ষণ ও হত্যার ছয় আসামির মধ্যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আদালত। পঞ্চম আসামি রাম সিংহ ইতোমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ২৩ বছর বয়সী প্যারামেডিক ছাত্রী নির্ভয়াকে দক্ষিণ দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও রড দিয়ে নির্যাতন শেষে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছিল। ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে বিক্ষোভের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।