ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বুধবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়।
বিবৃতিতে নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি, বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গোলযোগ ও সহিংসতা, ভোট প্রদানে বাধা, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব পালনে অনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নির্ভর নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতায় গভীর হতাশা ও উদ্বেগ ব্যক্ত করে টিআইবি।
টিআইবি বলেছে, বিতর্কিতভাবে মাঝপথে নির্বাচন বর্জন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুস্থ পরিবেশ প্রতিষ্ঠার পথে নতুন করে ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলকে সংযত, সহনশীল ও গণতন্ত্র চর্চার প্রতি শ্রদ্ধশীল হওয়ার আহবান জানানো হয় বিবৃতিতে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও পেশি শক্তির প্রয়োগে ব্যাপক অনিয়ম সংগঠিত হওয়ায় সদ্য সমাপ্ত তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী আইন প্রয়োগসহ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে ব্যর্থতায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ব্যাপক কারচুপির নির্ভরযোগ্য তথ্য আর প্রমাণ থাকার পরও কমিশন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে অস্বীকৃতি, মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে নিজেকে বিব্রতকর করেছে। যথাযথ দায়িত্ব পালনে কমিশন যে শুধু ব্যর্থ হয়েছে তা নয়, বরং কমিশন ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক আচরণ করায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ও জন আস্থা ধূলিসাৎ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পেশিশক্তি দমনসহ আইনের লঙ্ঘন প্রতিহত করে পেশাদারির সঙ্গে নির্বাচনের জন্য সুস্থ ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে ভোট প্রদানে নাগরিকদের সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার জন্য অর্পিত দায়িত্ব পালনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী একদিকে নীরব দর্শক ও অন্যদিকে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে শুধু ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক শিখণ্ডি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ওপর মহলের নির্দেশের অজুহাতে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশি বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা প্রদানে ব্যর্থ হয়ে এই বাহিনী তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
টিআইবি মনে করছে, নির্বাচন কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এরূপ ব্যর্থতা মানুষের ভোটের অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব করেছে এবং একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানই নিজেদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রত করেছে।অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঝপথে নির্দলীয় এই নির্বাচন বিতর্কিতভাবে বর্জন করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে সুস্থ পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নতুন করে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।
এই নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনীতি থেকে উত্তরণে যে ইতিবাচক সুযোগের সৃষ্টি হয়েছিল, মঙ্গলবার তিনটি সিটি নির্বাচনই সামগ্রিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির ঝুঁকি পুনরায় সৃষ্টি হয়েছে। জনজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব দলকে রাজনৈতিক সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতন্ত্র চর্চার ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।