ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সরকারে প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ৭ দফা প্রস্তাব এবং আরপিও সংশোধনসহ নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ এবং তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং তাদের যোগ্যতাসহ নির্বাচনের নানা বিষয়ের উপর প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি।
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এই প্রস্তাব পেশ করেন।
আগামী ফেব্রয়ারিতে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। নতুন নির্বাচন কমিশনের গঠনের ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব পেশ করা হয়। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনেরও প্রস্তাব করেছেন খালেদা।
নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখাও ভবিষ্যতে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কমিশন গঠনের রূপরেখা বর্ণনায় বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হলো:
- সকল নিবন্ধিত দল এবং/অথবা প্রথম জাতীয় সংসদে নির্বাচন করেছে বা বিভিন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এমন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা আলোচনা করতে হবে।
- এসব আলোচনায় বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দল এবং ১৪ দলের জোটের আরো দুজন রাজনীতিবিদ উপস্থিত থাকতে পারবেন।
নিবন্ধতিক দল এবং/ অথবা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন দলগুলো থেকে সদস্য নিয়ে রাজনৈতিক দলের কনসেনসাসে কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করবে। - নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের যোগ্যতা বা অযোগ্যতা বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা পযর্ন্ত আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
- নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং/অথবা ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিশিষ্টজনদের নিয়ে বাছাই কমিটি গঠন করতে হবে।
- অবসরপ্রাপ্ত, দল নিরপেক্ষ, কর্মক্ষম সাবেক প্রধান বিচারপতি যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসরের পরে সরকারের কোন লাভজনক পদে ছিলেন না তাকে বাছাই কমিটির আহ্বায়ক নিয়োগ করতে হবে।
- আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে ছিলেন না তিনি কমিটির সদস্য হবেন। দলনিরপেক্ষ সাবেক সচিব সদস্য হবেন তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি সদস্য হতে পারবেন না।
- বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বা বিশিষ্ট নাগরিক সদস্য হতে পারবেন।
- দলনিরপেক্ষ দক্ষ, বিশিষ্ট নারী সদস্য হতে পারবেন।
- বাছাই কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনের নাম প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবেন।
- একজন নারীসহ দক্ষ দলনিরপেক্ষ এমন ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে ৪ জন নির্বচান কমিশনার হতে পারবেন।
- চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর হয়নি তিনি নির্বাচন কমিশনের সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন না।
- নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল এবং অথবা বিভিন্ন সময়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন দল প্রতি পদের বিপরীতে ২ জন করে নাম প্রস্তাব করতে পারবে।
- সিইসি এবং কমিশনার নির্বাচনে প্রস্তাবিত নাম রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটির কাছে পাঠাবেন। সেসব নাম থেকে উভয় পক্ষ থেকে পাওয়া অভিন্ন নাম চূড়ান্ত করতে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। অভিন্ন নাম না পাওয়া গেলে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বার বার আলোচনা করবে। অভিন্ন নাম পাওয়ার লক্ষ্যে নতুন নাম গ্রহণ করতে পারবে। এ প্রক্রিয়ায় নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে।
- এ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলে অবশিষ্ট মনোনিতদের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি নাম চূড়ান্ত করবেন।
বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিতে না পেরে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া অবাধ, সুষ্ঠও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন চান। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারে এবং যে নির্বাচনের ফলাফল কেউ বদলে দিতে না পারে, সেবিষয়ে তিনি জোর দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন: ভবিষ্যতে যথা সময়ে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে।