আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের শেষ বাজেট সংসদে পাস হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার এই বিশাল বাজেটে ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখার আশা করা হয়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্বাচনের বছর হিসেবে বছরের প্রথম ৬ মাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য বছরগুলোতে প্রথম ৭/৮ মাস ধীরগতিতে বাজেট বাস্তবায়ন হয়, আর শেষের দিকে এসে তাড়াহুড়া করতে দেখা যায়। এবার হয়তো বিষয়টি উল্টো হতে যাচ্ছে।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
সার্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে নেয়া হবে ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ২ দশমিক ৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই বাজেটের আকার বেশ বড় হচ্ছে। রাজস্ব সংগ্রহ ও কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রতিবছরই নানা শঙ্কা থাকলেও কোনো ধরণের বড় ঝামেলা ছাড়াই দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংক ও আর্থিকখাতে দেখা গেছে বেশ বিশৃঙ্খলা। অর্থমন্ত্রীর নিয়মিত মনিটরিং ও বক্তব্যের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকেও ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সরাসরি পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। এসব সামাল দিতেই হয়তো অর্থ বিভাগের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেটে জনগণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে আয়করসহ ইন্টারনেট ও নানা ভোগ্যপণ্যের উপরে ট্যাক্স কম রেখেছেন। এছাড়া সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সার্বিক দিক থেকে এই বাজেটের আয়-ব্যয় নিয়ে অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদের নানামুখী মত থাকলেও গত কয়েক বছরের আলোকে খুব একটা সমস্যার কিছু হবে বলে আমাদের মনে হয় না।
আওয়ামী লীগ জোট সরকারের এ মেয়াদের শেষ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের টানা ১০ বাজেট দেশের জনগণের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সার্বিক উন্নয়ন বয়ে আনুক, এই আমাদের প্রত্যাশা।