নির্বাচনী আইনের সংস্কার এবং নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাসহ নির্বাচন কমিশনকে মোট ৪০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং জাকের পার্টি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপে বৃহস্পতিবার সকালে বাসদ এবং বিকেলে জাকির পার্টি অংশ নিয়ে আলাদাভাবে এই প্রস্তাব দেয়।
এরমধ্যে জাতীয় সংসদে প্রতি তিন আসনে একজন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান প্রণয়নসহ ১৩ দফা প্রস্তাব দেয় বাসদ এবং নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার স্থায়ী কাঠামো প্রণয়নসহ ২৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে জাকের পার্টি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেয় বাসদের ১৪ জন এবং এবং জাকের পার্টির দশ জন প্রনিনিধি। নিজ নিজ দলের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান এবং জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সল।
বাসদের ১৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, অবাধ নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য শুধুমাত্র রুটিন কাজ পরিচালনাকারী সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি বিধান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা কিভাবে দল নিরপেক্ষ করা যায় সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় মতামত সৃষ্টি এবং নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আলাদা আইন।
নির্বাচন কমিশনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণহীন আলাদা বাজেটের প্রস্তাব দিয়ে দলটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, নির্বাচনী জামানত ৫ হাজার টাকার বেশি না করা, নির্বাচনী ব্যয় ১০ লাখের মধ্যে সীমিত রাখা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য আজীবন সম্মানী ভাতা চালু করা, নির্বাচনে কালো টাকা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও আঞ্চলিকতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা, আদালত কর্তৃক শাস্তি ব্যাতীত শুধুমাত্র ফৌজদারি মামলায় চার্জশিট গৃহীত হলেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরখাস্ত না করা, পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা এবং নির্বাচনী বিরোধ মেটানোর জন্য স্বতন্ত্র ও আলাদা আদালত গঠন।
বিকেলের সংলাপ শেষে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মোট ২৭টি প্রস্তাব দিয়েছি কমিশনকে। আমরা চাই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেখানে সব দল স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিতে পারবে।
নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে তিনি বলেন, একেক নির্বাচনের আগে একেক ধরনের সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে। তাই নির্বাচনকালীন সরকারের একটি স্থায়ী কাঠামো প্রণয়নের প্রয়োজন।
আজকের বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করল নির্বাচন কমিশন। গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ আগস্ট থেকে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইতোমধ্যেই সবগুলো দলের সঙ্গে সংলাপের সূচি প্রকাশ করেছে ইসি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৮ অক্টোবর এবং বিএনপির সঙ্গে ১৫ অক্টোবর সংলাপ করবে ইসি।
এছাড়া অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে, চলতি মাসের ৮ তারিখ সকালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বিকেলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ৯ তারিখ জাতীয় পার্টি, ১০ তারিখ সকালে বিকল্পধারা বাংলাদেশ; বিকেলে ইসলামী ঐক্যজোট, ১১ তারিখ সকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি; বিকেলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ১২ তারিখ সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বিকেলে গণতন্ত্রী পার্টি, ১৬ তারিখ সকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বিকেলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), ১৯ অক্টোবর সকালে জাতীয় পার্টি-জেপি; বিকালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।
এরপর ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মত বিনিময় করবে ইসি।