চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা ছোট হবে না: প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচনকালীন সরকারের আকার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা বেশ কিছুদিন থেকেই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারও সকলের ধারণা ছিল মন্ত্রিসভার আকার ছোট করে আনা হবে। এর আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রেখেছিলেন এমন ইঙ্গিত। তবে এ বিষয়ে অবস্থান বদলে এবার তিনি বলছেন: নির্বাচনকালীন সময়েও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মন্ত্রিসভা ছোট করার চিন্তা সরকারের নেই। তবে, বিরোধী দল যদি দাবি করে সেটা হতে পারে। পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে বিরোধী দলের অবস্থানের ওপর।

এ বিষয়ে তিনি সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল দলের উপস্থিতির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। যেহেতু মন্ত্রিসভায় সকল জনপ্রতিনিধির প্রতিনিধিত্বকারী দলের অংশগ্রহণ রয়েছে, তাই একজনকে একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে উন্নয়নকে ব্যাহত করার প্রযোজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন রখেন তিনি।

চার দিনের সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরে সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে তিনি বলেন: ২০১৪ সালে আমরা চেয়েছিলাম সব দল এক হয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকেও আমরা আহবান জানিয়েছিলাম, কারণ তারা নির্বাচনে আসতে রাজি ছিল না। তারা যদি নির্বাচনকালীন সরকারে আসতো যেকোনো মিনিস্ট্রি দিতে আমি রাজি ছিলাম। তখন তারা আসেনি। অন্য বিরোধী দলে যারা তাদেরকে নিয়েই আমি মন্ত্রিসভা তখন গঠন করি। সেই মন্ত্রিসভাটি ছোট আকারে ছিলো।

‘‘কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আপনারা দেখেছেন পার্লামেন্টে যারা প্রতিনিধিত্ব করছে, যে দলগুলো আছে; তাদের সবাইকে নিয়েই একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। তাহলে তো মন্ত্রিসভা ওই ভাবেই আছে। সবাইকে নিয়েই চলছে, আগে এটা ছিল না। আগে শুধু আওয়ামী লীগের যারা জনপ্রতিনিধি তারা সকলেই মন্ত্রিসভায় থাকতেন। এখন তেমনটা না।’’

নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে তিনি আলাপ করেছেন বলেন উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন: আমি এ বিষয়ে বিরোধী দলের নেতার সঙ্গেও কথা বলেছি। আপনারা যেভাবে চান আমরা সেভাবেই করতে পারব। আমাদের এতগুলো প্রজেক্ট রানিং রয়েছে, আমি যদি কারো হাতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় দিয়ে দেই; জানি না সে কাজটা ঠিকঠাক করতে পারবে কিনা?

প্রধানমন্ত্রী বলেন: আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে অনেকগুলি কাজ আমাদের করতে হবে। আমি জানি না এখান থেকে কাউকে সরালে সেই কাজগুলো ব্যাহত হবে কিনা। সেই সমস্যাটাও রয়ে গেছে। কারণ আমি কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে চাই। সবাই সবার মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্টগুলো করছে, আপনারা দেখেছেন আমরা কিভাবে পরিশ্রম করছি।

এই ইস্যুতে বিভিন্ন দেশ (অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ভারত) থেকে তথ্য সংগ্রহ, সরকার প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রিসভার আকার সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন: তাদের দেশে আমাদের মতোই নির্বাচনী পদ্ধতি প্রচলিত। তারা নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রীসভা ছোট করে না।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে এসময় তিনি জানান।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপের সম্ভবনা
নির্বাচনকে সামনে রেখে নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে যদি সরকারকে আলোচনার জন্য কোন চিঠি দেওয়া হয়, সরকারের অবস্থান কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন: সংলাপের জন্য ঐক্যফ্রন্টের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে সেটা দেখা যাবে।

ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন: যারা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল ড. কামাল হোসেন গং তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এখানে আমার কিছু বলার নেই। বাংলাদেশের মানুষই বিচার করবে। বাংলাদেশের মানুষ যদি তাদের চায়, চাইবে….। আমার কোন আপত্তি নেই।

নেতৃত্বে নিজেকে প্রমাণ করেছেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: যেটা প্রমাণ করার দরকার ছিল, আমি করে দেখিয়েছি।আমি উন্নয়ন করতে চাই। এটুকু আমি দাবী করতে পারি দিনবদলের স্লোগান নিয়ে এসে, বদল আমরা করেছি। বাকি যতোটুকু আছে, আর একবার ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারব। এ বিশ্বাস আমার আছে। অন্তত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ করে উঠবে এটুকু করতে পারব এ বিশ্বাস আমার আছে।

নির্বাচন বানচালে কোন ধরনের অরাজকতা হলে তার সমুচিত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। বলেন: ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের মানুষই রুখে দাঁড়াবে। জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায়, কেউ কিছু করতে পারবে না। আমি জনগণের শক্তিকে বিশ্বাস করি।

যেকোন অরাজকতা, ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেওয়ার সামর্থ্য তার দল আওয়ামী লীগ এবং সরকারের রয়েছে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।