চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নির্জন পথে পুলিশ সেজে গাড়িসহ চালককে অপহরণ

কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার কথা বলে প্রাইভেটকার ভাড়া করে যাত্রীবেশে চড়ে বসেন অপহরণকারীরা। মাঝপথে চক্রের অন্য সদস্যরা পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি থামায়। এরপর তারা গাড়িতে উঠেই অস্ত্রের মুখে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। নির্ধারিত স্থানে চালককে বেঁধে রেখে চলতে থাকে নির্যাতন।

অপহৃত চালকের ফোন নাম্বার থেকেই পরিবারের সদস্যদের ফোন দিয়ে চাইতে থাকেন মুক্তিপণ। কখনো মুক্তিপণের বিনিময়ে চালক ছাড়লেও গাড়ি ফিরিয়ে দেয়না। আবার গাড়ি ফিরিয়ে নিতে চাইলেও আবারো মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন চক্রটি।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মাদারীপুর যাওয়ার কথা বলে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নেয় দুইজন। সন্ধ্যায় যাত্রীবেশে গাড়িতে চড়ে বসেন অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্য। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ২ টার দিকে কাঁঠালবাড়ি এলাকা থেকে আরো কয়েকজন গাড়িটি থামিয়ে গাড়িসহ চালককে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

অপহরণকারীরা চালকের পরিবারকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করলে র‌্যাব-৪ এ একটি অভিযোগ করা হয়। এর ভিত্তিতে টানা অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিনগত রাতে মাদারীপুরের দুর্গম চর থেকে চালক এনায়েত উল্লাহকে (৩২) উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে গাড়িটিসহ আটক করে র‌্যাব।

আটকরা হলেন- শাহ জালাল (৩২), ফয়সাল (২২), জয়নাল হাজারী (৩০) ও রাকিব (২২)।

শুক্রবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা ভিকটিম এনায়েতকে মাদারীপুরের দত্তপাড়া চর এলাকায় কাশবনে ছোট একটি ঘরে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালাতে থাকে। গাড়িটি ফরিদপুরের সদরপুরে নিয়ে যায়। ভিকটিম এনায়েতকে মারধর করে তার মোবাইল থেকে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ভিকটিমের পরিবার থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানে নামে র‌্যাব-৪। প্রায় তিনদিন টানা অভিযানের পর দুর্গম চর থেকে এনায়েতকে উদ্ধারসহ চার জনকে আটক করা হয়।

চক্রের সদস্যরা যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে বিভিন্ন পন্থায় অপহরণ ও ছিনতাই করে আসছিলো। কখনো গাড়িতে উঠেই চালকের হাত-পা বেঁধে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়, কখনো তারা অস্ত্রের মুখে চালককে নির্ধারিত স্থানে যেতে বাধ্য করে। কখনো মাঝপথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তল্লাশির নামে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা।

মোজাম্মেল হক বলেন, ভিকটিম এনায়েতকে অপহরণের সঙ্গে দশ জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। চারজনকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। আশা করছি শিঘ্রই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

র‌্যাব জানায়, ভিকটিম এনায়েত উল্লাহ সম্প্রতি ১২ লাখ টাকা দামে অগ্রিম ৬ লাখ টাকা দিয়ে একটি নতুন প্রাইভেটকার কিনেন। বাকি টাকা প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা কিস্তিতে শোধ করার কথা ছিলো। সেদিন তার কাছে দুই মাসের কিস্তির ৭০ হাজার টাকাও ছিলো।

চক্রটি সবসময় রেন্ট এ কারের নতুন গাড়ি এবং চালকের আর্থিক অবস্থা দেখে টার্গেট করতো। ঘটনার দিন মাদারীপুরে যাওয়ার জন্য ভিকটিম এনায়েতের গাড়িতে যাত্রীবেশে দুইজন চড়ে বসেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়িটি কাঁঠালবাড়ি এলাকায় গেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তিনজন গাড়িটিকে থামার সিগনাল দেয়। গাড়ি তল্লাশির নামে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা।

ভিকটিম এনায়েত বলেন, চক্রের কেউ আমার পূর্ব পরিচিত না। তারা আমাকে ফোন করে গাড়ি ভাড়ার জন্য ঠিক করে। কাঁঠালবাড়ি এলাকায় গেলে টর্চ লাইট দিয়ে আমাকে থামার নির্দেশ দেয়। এরপর গাড়িসহ আমাকে নিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে।