সঙ্গত কারণেই ২২ মার্চের পরিবর্তে পাঁচদিন পর আজ পালিত হলো বিশ্ব পানি দিবস। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করায় ২২ মার্চ সরকারিভাবে তা উদযাপন করা হয়। এ জন্য কয়েকদিন পিছিয়ে ২৭ মার্চ পানি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বছর পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নেচার ফর ওয়াটার’ বা ‘পানির জন্য প্রকৃতি’। আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে সারা পৃথিবীতেই সুপেয় ও নিরাপদ পানির সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। বলা হয়, পানির আরেক নাম জীবন। কিন্তু সেই পানির যোগানই যদি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাহলে জীবনও সংকটে পড়বে; এটাই স্বাভাবিক। ভৌগলিক গঠন অনুসারে পুরো পৃথিবীর ৩ ভাগই পানি, আর ১ ভাগ স্থাল। তারপরও সুপেয় পানির পরিমাণ একেবারেই কম। এ কারণে বিভিন্ন দেশের অন্তত ১শ’ কোটি মানুষের জন্য সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। আমাদের দেশে নিরাপদ পানির তেমন সংকট না থাকলেও ভবিষ্যতে তা নিয়ে শঙ্কা আছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি দিবস উপলক্ষে তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন পানির অপচয় না করি। পানিকে দূষণমুক্ত রাখি এবং পানিকে সম্পদে পরিণত করার চেষ্টা করি।’ সরাসরি কেউ স্বীকার না করলেও বাংলাদেশও সুপেয় পানির সংকটে পড়তে পারে। তার কিছু আলামতও দেখা যাচ্ছে। একসময় শ্যালো বা ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে খুব সহজেই সুপেয় পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন শহরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় আগের মতো সহজে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নানা কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এছাড়াও আর্সেনিক, মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যালে নিরাপদ পানির সংকটের বার্তা দিচ্ছে। এ অবস্থায় অামাদের প্রস্তুতি জরুরি। এরই মধ্যে এমন সংকটে পড়ে পৃথিবীর অনেক দেশকেই পানি আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। আমাদের মতো দেশ সেটাও কল্পনাও করতে পারে না। এ দেশেও শিল্পায়নের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নিরাপদ পানির যোগান সংকুচিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প উপায়ে সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য শুধু সরকারের দিকে না তাকিয়ে সামাজিক ও গোষ্ঠীগত পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদেরকেই। মনে রাখতে হবে, নিরাপদ পানি ছাড়া পৃথিবী প্রাণহীন।