ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে পরিবহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
মেহেরপুর
ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে পরিবহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে মেহেরপুরে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, কয়েক দিন ধরে ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিবহন ভাঙচুর করছে। এতে শ্রমিক ও মালিকদের জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসহ নিরাপত্তা নেই। ফেডারেশনের নির্দেশে মেহেরপুরে থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল ধরনের দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বেনাপোল
সারাদেশে গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা না থাকায় বেনাপোল থেকে সকল ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে যশোর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন।
যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করার কারণে ভারত থেকে ফিরে আসা শত শত পাসপোর্ট যাত্রী আটকা পড়েছে বেনাপোল চেকপোষ্ট এলাকায়। যাত্রীরা শুয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগী ও ভারতীয় যাত্রীরা। তারা না যেতে পারছে ঢাকায় না পারছে ভারতে ফিরে যেতে।
ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা জানান. অপরাধ করেছে ড্রাইভাররা আবার তারাই বাস চালানো বন্ধ রেখেছে। বাস চলাচল না করার কারণে তারা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
যশোর রেলগেট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, আমাদের গাড়ি চালাতে কোন সমস্যা নেই তবে রাস্তায় আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বরিশাল
বরিশাল থেকে শুক্রবার ঢাকা রুটে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। বাসচালকরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে কোন বাস বরিশাল না আসায় বরিশাল থেকেও বাস ছাড়া হচ্ছেনা।
বরিশাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আফতাব হোসেন জানা,ন তারা বাস বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। অভ্যন্তরীন রুটে বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত বাস চালু রেখেছেন তারা। তবে মাদারীপুর বাস মালিক সমিতি মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি। এ কারণে বরিশাল এর সাথে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সিলেট
সিলেট থেকে সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো যানবাহন ছেড়ে যাচ্ছে না কিংবা প্রবেশও করছে না।
চালকেরা জানিয়েছেন- সড়কে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মালিক সমিতির নির্দেশে তারা যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিক ধর্মঘট না ডাকলেও পরিবহন শ্রমিকদের একাংশের বাধার কারণে সিলেটে প্রাইভেট যানবাহন ও সিএনজি অটোরিক্সার চলাচল কমে এসেছে।
ময়মনসিংহ
নিরাপত্তাজনিত কারণে দ্বিতীয় দিনের মতো ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা রুটে সকল প্রকার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির বাস বিভাগের সম্পাদক বিকাশ সরকার বলেন, রাস্তায় বের হলেই শিক্ষার্থীরা ইচ্ছামতো বাস ভাঙচুর করছে। এতে মালিকরা লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই নিরাপত্তার অভাবে আজও সকাল থেকে ঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে বিকেল থেকে আবার বাস চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার কথাও বলেন বিকাশ সরকার।
হবিগঞ্জ
নিরাপত্তাজনিত কারণে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবিগঞ্জেও বাস, ট্রাক, লরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে হবিগঞ্জ পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। শুক্রবার সকালে হবিগঞ্জ পৌরবাস টার্মিনাল থেকে দেশের কোথায় বাস ছেড়ে যাননি। বাস চলাচল বন্ধ থাকার ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের পোহাতে হচ্ছে। অনেক যাত্রীরা কোন বাস না পেয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সজিব আলী জানান, ছাত্ররা চালকদের ড্রাইভিং লাইন্সেস দেখছেন। ড্রাইভার শ্রমিকদের মারধোর করছে শিক্ষার্থীরা। ড্রাইভারদের লাইন্সেস দেখা ছাত্রদের কাজ নয়। নিরাপত্তার অভাবে বাসের মালিকগণ বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাস, ট্রাক, লরি চলাচল বন্ধ থাকবে।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া থেকে সড়কপথে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাসের নিরাপত্তার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। শুক্রবার সকাল এগারটা থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব সড়ক পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিক নেতারা।
কুষ্টিয়া জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল আলম জানান, শিক্ষার্থী ও বহিরাগত কিছু যুবক লাইসেন্স দেখার কথা বলে বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।