মঙ্গলবার সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হতে যাওয়া এই নির্বাচনে প্রায় পৌনে ৯ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে সিলেটে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন, রাজশাহীতে ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন এবং বরিশালে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটার তাদের পছন্দের নেতৃত্বকে বেছে নেবেন। এরই মধ্যে প্রার্থীরা তাদের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন। এখন অপেক্ষা ভোটের।
জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নানা কারণেই এই তিন সিটি নির্বাচন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা, আশঙ্কা আর সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি খুলনা এবং গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের উদাহরণ টেনে এই নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনকে সঙ্গে করে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের বিজয় ছিনিয়ে নেবে।
তবে বিএনপি এমন দাবিকে নাকচ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি আগেভাগেই অকারণ দোষারোপ করছে। নানান হুমকি দিচ্ছে। নির্বাচনে কোনো রকম প্রভাব বিস্তার করছে না সরকার। তাদের দাবি, উন্নয়নের স্বার্থেই ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। কেননা এই তিন সিটিতে গত পাঁচ বছরে কোনো উন্নয়ন করেনি বিএনপির হয়ে নির্বাচিত মেয়ররা।
রাজনৈতিক অবস্থান রক্ষায় বড় দুই দল যাই বলুক না কেন, আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য এই তিন সিটির নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে নিজ নিজ দল সম্পর্কে ভোটারদের মনোভাব যাচাই করে নেয়া। আর সেই মতো ওই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সেরে রাখা। বিশেষ করে বিএনপির কাছে এই নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্ববহ। এর উপরই নির্ভর করছে দলটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে কি না?
রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে বিএনপি দলীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে- তিন সিটিতে খুলনা এবং গাজীপুরের মতো নির্বাচন হলে তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে। এমন কি এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না বিএনপি।
যদিও নির্বাচন কমিশন বারবার বলে আসছে, খুলনা ও গাজীপুরের চেয়ে এই তিন সিটিতে অনেক ভালো নির্বাচন করবেন তারা। কোনোভাবেই কোনো অনিময় বা কারচুপি হতে দেবে না। কিন্তু এরই মধ্যে বিএনপিসহ একাধিক দল অভিযোগ করেছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি।
আমরাও দেখেছি, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। অহরহ ঘটেছে আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বা হয়রানী না করতে হাইকোর্টকেও নির্দেশনা দিতে হয়েছে। এতকিছুর পরেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের অপেক্ষায় আছে পুরো দেশ।
আমরা মনে করি, এই তিন সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করবে। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতিকে পথ দেখাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের।