নাটক থেকে চলচ্চিত্রে এসেও আলোচনায় রয়েছেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। আইনে লেখাপড়া করে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করলেও সিয়াম ঝুঁকেছেন চলচ্চিত্রে। একের পর এক চলচ্চিত্রে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে এ নায়ককে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, সিয়াম এক নতুন সম্ভাবনা। করোনার কারণে সবার মতো এখন তিনিও ঘরবন্দি। সময় দিচ্ছেন পরিবারকে। কিন্তু তার আগে লম্বা সময় শুটিং করেছেন। টানা কাজ করেছেন শান, অপারেশন সুন্দরবন ও অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন ছবিতে। টানা শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, করোনাকালের উপলব্ধি ও করোনা পরবর্তী চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে:
শুটিং শেষে ঘরবন্দি আছেন কতদিন?
১ মাস ৭ দিনের মতো একেবারে ঘরবন্দি। ৪ এপ্রিল শুটিং থেকে ফিরে আর বের হইনি। তার আগে আমাদের শুটিং হয়েছে জাহাজে। সেখানে ২৯ দিনের মতো এক প্রকার কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম।
ঘরবন্দি থাকার আগের দিন পর্যন্ত আপনি একাধিক ছবি দিয়ে টানা দুই মাসের বেশি শুটিং করেছেন। যেটা আপনার ফিল্ম ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। জার্নিটা কেমন ছিল?
কাজ করতে তো ভালোই লাগে। হাতে কাজ ছিল তাই করতে পেরেছি, এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তবে এতো প্রেসার এর আগে কখনো হ্যান্ডেল করতে হয়নি। এটা একটা অভিজ্ঞতা হলো। টানা শুটিংয়ে বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে কাজ করে অনেক নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো। সুন্দর সম্পর্ক মেইন্টেন করাও শিখলাম। তবে ফ্যামিলিকে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে পরিবারের মানুষগুলো বড় ছাড় দিয়েছে। এজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
শান, অপারেশন সুন্দরবন, অ্যাডভেঞ্জার অব সুন্দরবন ছবিগুলোর শুটিং টানা করেছেন। এতে লুক ও চরিত্র ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জিং ছিলো নিশ্চয়। সামাল দিলেন কীভাবে?
ছবিগুলোর শুটিংয়ে যাওয়ার আগেই লুক কীভাবে কতোটুক চেঞ্জ করতে পারবো ঠিক করেছিলাম। বাকিটা চরিত্র অনুযায়ি শুটিংয়ে করতে হয়েছে। লুক পরিবর্তনের জন্য আমি বেশি সময় নিতে পারিনি। কারণ প্রযোজক পরিচালকের দিকটাও আমাকে বুঝতে হয়েছে। আমার সিডিউল পাওয়ার সাথে অন্যান্যের সিডিউল মেলানোর ব্যাপার থাকে। আমার ম্যাক্সিমাম ছবির শুটিং দুর্গম লোকেশনে হয়েছে। সেখানে কাজ করার কন্ট্রোলেরও একটা ব্যাপার আছে। যেমন সুন্দরবন শুটিং করেছি। নিজের আরামের আগে প্রযোজক পরিচালকের কথা ভাবি। তারা যেন কোনোভাবেই সাফার না করে সেই বিবেচনা করি। সেজন্য বাধ্য হয়েও একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ শেষ করেছি।
আপনার হাতে অনেকগুলো ছবি। কোনটার কাজ কতদূর? আপডেট জানাবেন?
‘শান’ এর দুটো গানের শুটিং বাকি। করোনাভাইরাস না এলে সবকিছু শেষ করে ঈদে মুক্তি পেত। ‘বিশ্বসুন্দরী’র সেন্সর হয়ে আছে। করোনার কারণে মুক্তি পায়নি। হয়তো আরও দুদিন ‘পাপপুণ্য’ ছবির কাজ করতে হবে। এডিটিংয়ের পর এই সিন্ধান্ত এসেছে। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ গান বাদে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। ‘অ্যাডভেঞ্জার অব সুন্দরবন’-এ গান এবং ফাইট বাদে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ।
শুনেছি আপনার ‘ইত্তেফাক’ ছবি নাকি বাজেট সংকটে পড়েছে? শুটিং শেষ হতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে?
ইত্তেফাকের বাজেট সংকট বা অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি। তবে সিলেটে ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও চমৎকারভাবে হয়েছে। যতটুকু কাজ করেছি একেবারে রিয়েলিস্টিকভাবে হয়েছে। তাই শুটিং করা ও সবকিছু ম্যানেজ করা ছিল কঠিন কাজ।
ঈদে ‘শান’ আসছে না। শুনেছি ছবির বাজেট অনেক বেশি। ঈদ উৎসবে মুক্তি না দিলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির শঙ্কা থাকছে না?
সবসময় মনে করতাম ২০২০ আমাদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর বছর ছিল। নির্মাতারা আরও ভালো ভালো ছবি নিয়ে আসছিলেন। ঠিক সেই সময়ে করোনা আঘাত হানলো। এজন্য ওয়ার্ল্ডের সকল ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমার কাছে মনে হয় শান, মিশন এক্সট্রিমের মতো ছবি পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য দরকার। যখনই এসব মৌলিক গল্পের ছবি আসুক দর্শকদের বড় সাপোর্ট দরকার। নইলে মৌলিক গল্পে বড় আয়োজনের এমন ছবি আসবে না। শুরু থেকে দর্শক যেভাবে সাপোট দিয়েছে তা বজায় থাকলে কোনো নেগেটিভ শঙ্কা থাকবে না।
ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় এসে যেভাবে ব্যস্ততা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এই মসৃণ পথচলা সম্ভব হচ্ছে কীভাবে?
আমার মতো আরও আর্টিস্টরা নাটক থেকে চলচ্চিত্রে এসেছেন। তারা তাদের মতো কাজ করেছেন। কিন্তু আমি যেটা মনে করি, মানুষ আমার প্রথম ছবিতেই গ্রহণ করেছেন। কেন ভালোবাসা দিয়েছে সেটা দর্শকই ভালো বলতে পারবেন। সেই সাপোর্ট পেয়েই আমি সহজেই চলতে পারছি। আমার দিক থেকে যা ছিল তা হচ্ছে প্রতিটা কাজে পরিচালক ও প্রোডাকশন টিমকে দেয়া কমিটমেন্ট রক্ষা করা। নিজের ভালোর চেয়ে আমার কাজের ভালো চেয়েছি। এটা যখনই করে পুরো ইন্ডাস্ট্রির মানুষও আমাকে ভালোবাসা দিতে শুরু করেছে। এছাড়া মসৃণ পথচলার কোনো ম্যাজিক নেই।
‘পোড়ামন ২’ এবং ‘দহন’ ছবি দুটি করেছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায়। আর ‘ফাগুন হাওয়ায়’ এবং ‘পাপপুণ্য’ ছবি দুটি করলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায়। দেশের শীর্ষ দুই প্রোডাকশন হাউজের সঙ্গে কাজের টেস্ট কেমন?
কাজের টেস্ট সত্যি দারুণ। না হলে কোনো প্রযোজনা সংস্থার হয়ে দ্বিতীয়বার কাজ করা সম্ভব হতো না। আমার ক্যারিয়ারে রিপিট ডিরেক্টর আছেন। একইভাবে প্রোডাকশন হাউজও রিপিট হয়েছে। আমার থেকে যদি প্রোডাকশন হাউজ সঠিক সার্ভিস না পেত তাহলে তো আমার পিছনে টাকা লগ্নি করতো না। আরও শিল্পী আছেন, তাদের ডাকতেন। দ্বিতীয়বার যখন ডাক আসে তখন ফিল করি: বিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধের জায়গাটা নিশ্চয়ই বেড়েছে। দুটি প্রোডাকশন হাউজই আমার পরিবারের মতো। কাজ করতে গেলে একেবারে মন থেকেই সবকিছু চলে আসে।
আপনি তো ব্যারিস্টার হিসেবে চেম্বারে মামলা মকদ্দমা নাড়া শুরু করেছিলেন। এখন চলচ্চিত্রে এতো ব্যস্ত, তারমানে ব্যারিস্টারিতে ভবিষ্যৎ দেখছেন না?
অবশ্যই আইন পেশায় যেতে চাই তবে ওইদিক এবং অভিনয় দুই মাধ্যমে সমানভাবে শতভাগ মনোযোগ দেয়া সম্ভব না। প্যাশনটা যদি এখন সেক্রিফাইস করি তাহলে হয়তো একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হবে অভিনয়টা কন্টিনিউ করলেও পারতাম! আমি চাইনা এই আফসোস হোক। এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি যে আমি চলে গেলে আমার চেয়ে ভালোবাসা দেয়া মানুষগুলো কষ্ট পাবে। তাই মাটি আঁকড়ে এখনো পড়ে আছি। দেখি সবাই মিলে ইন্ডাস্ট্রিকে কতোটা এগিয়ে নিতে পারি।
করোনা থেকে আপনি কোনো শিক্ষা বা ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন?
অনেক পজিটিভ দিক পেয়েছি। আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু যে যার জায়গা থেমে দৌড়াচ্ছি। দৌড়াতে দৌড়াতে এমন অবস্থা যে দাঁড়িয়ে চিন্তাও করিনি এতো বছর জীবন পার করে আসলে কী করলাম! করোনা আমাদের সবকিছু থামিয়ে দিয়েছে। এখন আমরা ঘরে বসে চিন্তা করতে পারছি এক জীবনে আমাদের অর্জন কী কী, ভুল-সঠিক কে কী করেছি! যেভাবে আমরা আগাচ্ছিলাম আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু আশা থাকতো না। করোনা মনুষ্যত্বে শেখাচ্ছে। ঝড় দুর্যোগের পর প্রকৃতি যেভাবে আবার সাজে, শীতে পাতা ঝরা গাছ ফাল্গুনে আবার নতুন করে সাজে, ফুল ফুটে। আমাদের জীবনটাও এমনই। করোনার কারণে আমরা হয়তো সুন্দর মুহূর্ত হারাচ্ছি, সামনে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবো কিন্তু এরপরেও আমাদের পুনর্জন্মের একটা সম্ভাবনা তৈরী করে দিয়েছে করোনা। অন্তত এই রিয়েলাইজেশনগুলো নিজের মধ্যে এসেছে। এছাড়া বাবা-মা, অবন্তি (স্ত্রী) ওদেরকে সময় দেয়া হচ্ছিল না। এজন্য আমি ওদের কাছে অনেক ঋণি হয়ে যাচ্ছিলাম। বাসায় থেকে তাদের একটু হলেও ওই ঋণ শোধ করতে পারছি।
করোনাকালকে অনেকে আত্মশুদ্ধি হিসেবে নিয়েছেন। কেউ বদ অভ্যাস ত্যাগ করছে। আপনি কোনো খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করেছেন?
আমার কাজগুলো নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করতাম। যেটা করছি সেটা ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা! আগামীতে যা করবো সেটাও বা কেমন হতে পারে। মানে কারণে অকারণেই আমার চিন্তা হতো। এই খারাপ অভ্যাসটা ব্রেকের কারণে বের হয়ে আসতে পেরেছি।
ছবি সংগ্রহ: সিয়াম আহমেদের ফেসবুক