২০১৯ বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য এক সাকিব আল হাসানকে দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। ব্যাটে-বলে এককথায় ছিলেন সবার সেরা। অসাধারণ সেই ফর্ম লম্বা করার সুযোগ পাননি টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, কৃতকর্মের জন্য আইসিসির নিষেধাজ্ঞা মিললে তাকে যেতে হয় ক্রিকেট থেকে দূরে।
বিশ্বমানের একজন ক্রিকেটারের কীভাবে নতুন করে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় সাকিবের সেটা ভালোই জানা। ২৯ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে গেছে। ফেরার পর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভক্ত-সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন তিনি। তখন সাকিবের ফিটনেস দেখে চমকেই উঠেছে সকলে! মনে হয়েছে যেন আগের চেয়েও ঝরঝরে হয়ে ফিরেছেন।
না বললেও বোঝা অসম্ভব ছিল না, একবছর খেলতে না পারার তাড়না থেকেই যে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন সাকিব। তবুও মুখ ফুটে জানিয়ে দিলেন আগের চেয়েও নিজের ফিটনেস-পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যেতে চান বাঁহাতি অলরাউন্ডার। লক্ষ্য ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
‘এখন আমার লক্ষ্য থাকবে যেখান থেকে শেষ করেছিলাম সেই জায়গায় আগে পৌঁছানো। এরচেয়েও যেন বেশি ভালো করতে পারি। সেই তাড়না আমার ভেতর থাকবে।’
‘যেহেতু পরের বিশ্বকাপ ভারতে, অবশ্যই আমাদের দলের আলাদা একটা পরিকল্পনা থাকবে, সবাই যে যার মতো আলাদা করে পরিকল্পনা করবে। করোনার জন্য একটা বছর খেলা হয়নি, তাই কেউই ওভাবে আসলে পরিকল্পনা করতে পারেনি। আমি নিশ্চিত সবাই যখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামবে, বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে খেলতে নামবে এবং সিরিজ বাই সিরিজ কীভাবে নিজের উন্নতি করা যায় সে বিষয়টা চিন্তা করবে।’
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার একমাস আগে গত সেপ্টেম্বরে বিকেএসপিতে একাকী ফিটনেস নিয়ে কাজ করে গেছেন সাকিব। লক্ষ্য ছিল শ্রীলঙ্কা সফরের আগে হারানো ফিটনেস ফিরে পাওয়া। সফর পিছিয়ে যাওয়ায় লক্ষ্য থেকে ১৫-২০ দিন পিছিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নিজেকে ফিরে পেতে চলতি মাসে কর্পোরেট টি-টুয়েন্টির দিকে নজর তার।
‘বিকেএসপির ট্রেনিংটা আমার খুব দরকার ছিল। যদিও ইচ্ছা ছিল আরও ১৫-২০ দিন করার। শ্রীলঙ্কা সিরিজ হয়নি, তাই সেটা আর চালিয়ে যাওয়া হয়নি। যদি ওই কয়দিন করতে পারতাম, পরের ১-২ বছরের প্রস্তুতি হয়ে যেত একেবারে। সামনে যে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আছে, মনে হয় আমি সেই ঘাটতিটা পূরণ করতে পারবো।’
নিষেধাজ্ঞার বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার নিয়ে কাটিয়েছেন সাকিব। সময়টাতে সতীর্থদের ম্যাচ খুব একটা দেখেননি বলে জানিয়েছেন, ‘সত্যি বলতে কখনও এমন মনে হয়নি। আমি আসলে কখনও ঐভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করি না। যেহেতু আগে থেকেই জানতাম, একবছর খেলতে পারব না, তাই এসব নিয়ে খুব একটা চিন্তা করিনি। যখন ম্যাচ হয়েছে দেখার চেষ্টা করিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম, সময়ের ব্যবধানের কারণে সেভাবে দেখতেও পারিনি। ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও আমার সময়টা দারুণ কেটেছে।’
সাকিবের আসল চ্যালেঞ্জ হতে পারে আবারও ড্রেসিংরুমে ফিরে সতীর্থদের হারানো বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা। সেই বিশ্বাস ফিরে পাওয়া কতটুকু কঠিন হতে পারে সাকিবের জন্য?
‘সন্দেহ হতেই পারে, অবিশ্বাস তৈরি হতেই পারে। সেটা কখনোই অস্বীকার করি না। যেহেতু এর ভেতরও আমার সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, কথা হয়েছে, কখনও ওভাবে ফিল করিনি। আশা করি, এই জায়গাটিতে সেভাবে সমস্যা হবে না। তারা যেভাবে আমাকে বিশ্বাস করত, এখনও সেভাবেই বিশ্বাস করবে।’
‘মনের কোনায় সন্দেহ জাগতেই পারে, এটা নিয়ে আফসোসের কিছু নেই। কারণ ঘটনাটাই এরকম, যেকোনো সময় যেকারও মনের কোনায় সন্দেহ জাগতে পারে। তবে আমার ধারণা, আমার প্রতি সবার আগে যে বিশ্বাস ছিল, এখনও থাকবে।’