মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের উপর শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি এ আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিজামীর খালাস বা লঘু দণ্ডের আশা করছেন আসামীপক্ষ। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আপিল বিভাগের নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার পর তাদের যুক্তি খণ্ডন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আসামীকে দেওয়া দণ্ডের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনী যুক্তি খন্ডন করে আসামীপক্ষ।
আসামীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সংগ্রাম পত্রিকায় তখন যতগুলো বক্তব্য নিজামী সাহেব দিয়েছেন সবগুলোই ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করেছে। চারটি পৃথক চার্জ বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, উনি কোনো অপরাধ সংঘটনের জন্য উসকানি দিয়েছে সেটা প্রমাণিত হয়নি’
‘যেহেতু ওই চার্জে তাকে খালাস দিয়েছেন এবং তার জন্য সরকার পক্ষ থেকে কোনো আপিল করা হয়নি সুতরাং এসব আর বিবেচনায় আসবে না।’
মাহবুব হোসেন বলেন, ডক্টর আলীমের স্ত্রী একটি বই লিখেছেন। তিনি সাক্ষীতে বলেছেন, তাকে আলবদররা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেছে, নিজামীর নির্দেশে তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এমন কোনো তথ্য তার বইতে ছিলো না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সরাসরি হত্যা করতে হবে এমন নয়। এই আইনে তার পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেই তিনি হত্যাকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আলবদরদের উদ্দেশ্যে যে উসকানিমূলক বক্তব্য উনি দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতেই আমাদের বুদ্ধিজীবীরা প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা আশা করি সর্বোচ্চ শাস্তিই তাকে দেওয়া হবে।
একাত্তরে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে আসামীপক্ষের দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কেও বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
বলেন, এই মামলাতেই প্রথম আসামীপক্ষের আইনজীবীরা সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। তারা গণহত্যা ও অন্যান্য বিষয়গুলো স্বীকার করে নিয়েছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার কথাও তারা স্বীকার করেছে।
দণ্ড বহাল রাখার বিষয়ে উভয়পক্ষ তাদের মতামত জানান।
আসামীপক্ষের দাবী, সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে আসামী নির্দোষ প্রমাণিত হবে। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সাজা যদি তাকে দেওয়াও হয় তবে সেটা লঘুদণ্ড দেওয়া হবে। কেননা যেটা প্রমাণিত হয়েছে যে সে সহযোগী হিসেবে ছিলো কিন্তু সরাসরি হত্যাকাণ্ডে ছিলো না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যায় যদি মতিউর রহমান নিজামী কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পান, মানে মৃত্যুদণ্ড। তাহলে জণগণ হতাশ হবে।
মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের উপর ১১ কার্যদিবস শুনানির পর শেষ হয় এই মামলার আপিলের শুনানি।
নিজামীর বিরুদ্ধে আনা হত্যা, বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এসব অভিযোগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ রায়ের পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ২৩ নভেম্বর নিজামী আপিল করেন। মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে এ আপিল করা হয়। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়।
তবে শুনানি চলাকালে নিজামীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত বিষয়গুলোতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমাতে আবেদন জানান আসামীপক্ষের আইনজীবীরা।