বহুমাত্রিক ও প্রথাবিরোধী লেখক, গবেষক ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখ শহরে তিনি মারা যান।
বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় হুমায়ুন আজাদকে ২০০৪ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওই বছর ৭ আগস্ট একটি গবেষণা বৃত্তি নিয়ে তিনি জার্মানি যান। এর পাঁচ দিন পর ১২ আগস্ট মিউনিখের নিজ ফ্ল্যাটে নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
বিক্রমপুরের রাড়িখালে ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল জন্ম হুমায়ুন আজাদের। পিতা আবদুর রাশেদ স্কুল শিক্ষক, মাতা জোবেদা খাতুন গৃহিণী। তার পূর্ব নাম হুমায়ুন কবির। ১৯৮৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি হুমায়ুন কবির নাম পরিবর্তর করে বর্তমান হুমায়ুন আজাদ নাম গ্রহণ করেন।
হুমায়ুন আজাদ রাড়িখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক (১৯৬২), ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৬৭) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করে ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
হুমায়ুন আজাদের পেশাগত জীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজে যোগদানের (১৯৬৯) মধ্য দিয়ে। পরে তিনি ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
লেখায় ধর্ম, মৌলবাদ, নারী ও রাজনীতি বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জন্য হুমায়ুন আজাদ বিপুলসংখ্যক পাঠককে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হন।
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। মূলত গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ুন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে একজন প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
হুমায়ুন আজাদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ষাটের বেশি। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে বাংলা ভাষা (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), অলৌকিক ইস্টিমার, ৫৬ হাজার বর্গমাইল, সবকিছু ভেঙে পড়ে, রাজনীতিবিদগণ, একটি খুনের স্বপ্ন, পাক সার জমিন সাদবাদ, রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা, নারী (নিষিদ্ধ ১৯৯৫), প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, বাঙলা ভাষার শত্রুমিত্র, বাঙলা ভাষা (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। ২০১২ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।