চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নিউ ইয়র্ক টাইমস কি সেদিন শুধু নামই ছেপেছিল?

গত ২৪ মে নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের পত্রিকার ছাপা সংস্করণে করোনায় মারা যাওয়া ১০০০ মানুষের নাম ছেপেছিল। একটি মহামারিতে এক লাখ মৃত্যুর ব্যাপকতাকে শত বছর পরেও যাতে মানুষ অনুধাবন করতে পারে, সে জন্যই তাদের এই ব্যতিক্রমী চেষ্টা। এর পেছনে মূল দর্শন ছিল অনেকটা এরকম: “তারা শুধু তালিকায় রয়ে যাওয়া নাম নয়। তারা আমাদেরই লোক।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস সেদিন নিছক মৃতদের নাম ছাপেনি। তারা নামের সাথে কয়েকটি শব্দ দিয়ে সেই ব্যক্তির মানুষ সত্ত্বাটাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যাতে পাঠক বুঝতে পারে কেন তারা আসলে “আমরাই।”

এজন্য টাইমসের সাংবাদিকরা স্থানীয় বা জাতীয় পত্রিকা ঘেঁটে ঘেঁটে বের করেছেন কোভিডে মারা যাওয়া মানুষের অবিচুয়ারি। তাদের সম্পর্কে প্রিয়জনরা কী বলছেন, সেখান থেকে একটি বাক্য তুলে নিয়ে সেই প্রথম পাতাটাকে তারা সাজিয়েছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, কেন তারা নিছক সংখ্যা নয়।

যেমন: ৮৫ বছর বয়সী রুথ স্কাপিনোক, যার হাতে বসে পাখি খাবার খেতো; অথবা ৯১ বছর বয়সী ক্লারা লুইস বেনেট, যিনি প্রতিবছর স্কুলের প্রথম দিনে তার নাতি-নাতনিদের গান গেয়ে শোনাতেন; আর রডরিক স্যামুয়েলস, যিনি ছোট ভাইকে কেউ কিছু বললেই চটে যেতেন – এসব একেকটি বাক্য একেকটি গল্প হয়ে উঠে এসেছিল সেই প্রথম পাতায়।

টাইমস ইনসাইডারে প্রকাশিত এক লেখায় (যেখানে টাইমসের সাংবাদিকরা তাদের নিজেদের কথা বলেন) পত্রিকাটির চীফ ক্রিয়েটিভ অফিসার টম বডকিন বলেছেন, “প্রথম পাতার জন্য দুই ধরণের আইডিয়া এসেছিল: কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া একশ জন মানুষের ছবি, অথবা পুরোপুরি ছাপা অক্ষর।” পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন ছাপা হরফে যাওয়ার, কারণ এটাই বেশি নাটকীয়। এভাবে তারা আসলে তিনশ বছর আগের, সাদাকালো ছাপা ডিজাইনে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।

এর পেছনে যে কত শ্রম গেছে, তা বোঝা যাবে, প্রথম পাতার অনলাইন ভিজ্যুয়ালাইজেশন দেখলে, একটি অবিচুয়ারি থেকে কোন শব্দটি বেছে নিতে হবে সেই সম্পাদকীয় জাজমেন্ট বুঝতে পারলে এবং কার নাম আগে কার নাম পরে যাবে তার পেছনের যুক্তি অনুধাবন করলে। সাদাকালো নামে ভরা একটি পাতার পেছনে যে কত গভীর সাংবাদিকতা এবং তার উপস্থাপনায় যে কী প্রচন্ড মানবিক আবেদন, এটি তার একটি নজির। আর একারণেই তাদের প্রচেষ্টাটি সাড়া ফেলেছে।

বলা দরকার, এতকিছুর পরেও কোনো কোন ব্যক্তির পরিচিতিতে ভুল হয়েছিল। কেউ নেভিতে চাকরি করতেন, কিন্তু লেখা হয়েছে আর্মি; কেউ একাউন্টেন্ট ছিলেন, ছাপা হয়েছে মিট-কাটার। পরে তারা সংশোধনীও দিয়েছে। কিন্তু এই ভুলগুলো তাদের সাংবাদিকতার আবেদনকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। তাই তেমন সমালোচনাও হয়নি।

আসলে, সেদিনের পাতাটাকে মারা যাওয়া ১০০০ মানুষের নাম বা পেশা – আলাদা করেনি। সেদিনের পাতাটাকে আলাদা করেছে প্রতিটি নামের পেছনের ব্যক্তিটি, যা কিনা তারা তুলে এনেছে কয়েকটি মাত্র শব্দে।

পাঠকদের অনেকেই সেই প্রথম পাতা দেখেছেন। সামাজিক মাধ্যমে সেটি নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। তারপরও নতুন করে, লাখো মৃত্যুর পেছনের মানবিক গল্পগুলোকে দেখতে চাইলে সেদিনের প্রথম পাতার পিডিএফ লিংকটি দেখে নিতে পারেন। এখানে পাবেন সেই রিপোর্টাজের অনলাইন উপস্থাপনা। আর এখানে, কিভাবে এই সাংবাদিকতা হলো, তার পেছনের গল্প।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)