মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও তার বর্তমান চাপে থাকা পরিস্থিতি নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন মাহফুজ আনামের কন্যা ও লেখিকা তাহমিমা আনাম।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গোয়েন্দা বাহিনীর দেয়া তথ্যের ভিত্তি সংবাদ প্রকাশের কথা স্বীকার করার পর দারুণ চাপে রয়েছেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে, সমন জারি হয়েছে, অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রদ্রোহেরও।
‘মাই ফাদার, দ্য এডিটর, আন্ডার ফায়ার’ (আমার বাবা, সম্পাদক, তোপের মুখে) শিরোনামে ওই নিবন্ধে তিনি বলেছেন, ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ডেইলি স্টার এখন দেশের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক। এছাড়া এর সহযোগী প্রকাশনা প্রথম দৈনিক প্রথম আলো দেশের সামরিক শাসন পরবর্তী স্বাধীন গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় শক্তি। যেখানে সাংবাদিকরা নিয়মিত কারারুদ্ধ ও গুম হয় যায় সেখানে এটা নিয়ে গৌরব করার মতো। এই পত্রিকা দুটি সময় সময়ই সরকারের ও বিরোধী দলের ভুলগুলো সমানভাবে তুলে ধরেছে।
মাহফুজ আনামের একটা সময়ে আইসক্রিম পার্লার খোলার ইচ্ছে থাকলেও পরবর্তিতে সাংবাদিক বনে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাবা এটা সময় মজা করে বলতেন-আমি একদিন আইসক্রিম পার্লার খুলবো। সেই মানুষ একটা সময় জাতিসংঘের চাকুরি ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। শুধু মাত্র একটা ইংরেজি পত্রিকা খোলার জন্য। তখন তার বয়স ছিলো ৪১।
তিনি বলেন, আমার বয়স তখন ১৫। বাবা পুরো পরিবারের সঙ্গে থাইল্যান্ডে বসবাস করতেন। ওই অবস্থায় ১৯৯১’র শুরুতে আমরা বাংলাদেশে ফিরে আসি। সময়টা এমন ছিলো, মাত্রই আট বছর স্বৈরশাসক এইচ.এম এরশাদের শাসনের অবসান হয়েছে। গণতন্ত্রের নবযাত্রার একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ওই সময়ে বাবা দেশে ফিরে আসতে সমর্থ হন এবং দেশের জন্য কাজ করা শুরু করেন।
এডিটর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের একমাসের মাথায় তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা করেন। কেননা, ওই সরকার বিরোধী দল এবং দ্বিদলীয় ঐক্যমত তৈরীতে ব্যর্থ হয়েছিলো। পরে তিনি বিরোধী দলের সংসদ বর্জন নিয়েও সমালোচনা করেন।
আস্তে আস্তে ‘ডেইলি স্টার’ এবং তার সহযোগী প্রকাশনা ‘প্রথম আলো’ বাংলাদেশে সর্বাধিক প্রকাশিক সংবাদ পত্রের জায়গা দখল করে। এ দুই পত্রিকা মিলে বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ায় বড় স্থান দখল করার পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ তৈরী করে।
তিনি বলেন, তারপরও আমার বাবা রাষ্ট্রের শক্তিশালী হাত থেকে
অনাক্রম্য নয়। সরকার, গোয়েন্দাবাহিনী, সেনাবাহনী ও পুলিশ-যেসমস্ত জায়গায়
তিনি স্বচ্ছতা চান সব জায়গা থেকেই চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন।
তাহমিমা
বলেন, ‘২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ওই
সময়ে তিনি গোয়েন্দা বাহিনীর কিছু তথ্য যাচাই না করে প্রকাশ করার জন্য দুঃখ
প্রকাশ করেছেন।
এরপর থেকেই তাকে টার্গেট করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হচ্ছে। কিছুদিন আগে তিনি আমাকে একটা টেক্সট করেন। আমি তখন লন্ডনে। সেখানে লেখা ছিলো,‘আমার বিরুদ্ধে ১৭ মিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা হয়েছে’। যেটি কিনা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মোটা বাজেটেরও বেশি।
তিনি বলেন, ডেইলি স্টার এবারই প্রথম সরকারে প্রথম
টার্গেট না। এর আগে ২০১৫ সালের মার্চেও হিজবুত-তাহরীর একটি প্রতিবেদন নিয়ে
সংসদে এর সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।