পাঁচ বছরের শিশু সামিন নিউইয়র্কের পুলিশকে ফোন করে বলেছিল, ‘মম সিক কান্ট টক, কাম সুন’। সামিন তখনো বুঝতে পারেনি কী অমূল্য সম্পদ হারিয়ে গেছে তার। জানেনা সে আর কখনোই তার মাকে ‘মা’ বলে ডাকতে পারবে না। পারিবারিক টানাপোড়েন আর অশান্তির জের ধরে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের নিকট এলেমহার্স্টে আত্মহত্যা করেছে বাংলাদেশি গৃহবধূ নাদিয়া আফরোজ সুমী।
সংসারের বোঝা বইতে না পেরে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন তিনি। তবে দুই পরিবারের কোন্দলের কারণে এখনো হিমঘরে পড়ে রয়েছে সুমীর লাশ।
মায়ের কথামতো শুক্রবার শিশু সামিন পুলিশকে কল করে আসতে বলেছিলো। এরপরই পুলিশ এসে সামিনের মা সুমীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সদ্য মা হারা শিশু সামিনের বাবা মাহফুজুর রহমান হার্ট অ্যাটাকে গত দু’বছর যাবৎ শয্যাশায়ী। বর্তমানে একটি রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বামীর অসুস্থতার পরপরই শিশু সন্তানটিকে নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে যান সুমী।
শয্যাশায়ী মাহফুজুর রহমান খুলনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে সমিতির পক্ষ থেকে বাসা ভাড়া বাবদ কিছু টাকা পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন কিছু অর্থসাহায্যও। কিন্তু নিউইয়র্কের মতো ব্যয়বহুল শহরের তুলনায় যা খুবই অপ্রতুল। সেই সঙ্গে ছিলো শ্বশুর বাড়ির লাঞ্চনা-গঞ্জনা যা প্রতিনিয়ত দুর্বিষহ করে তুলছিলো সুমীর জীবন।
সুমীর মৃত্যুর পর মাহফুজ এবং সুমীর দুই পরিবারই অভিভাবকত্ব চায় শিশু সামিনের। সুমী বেঁচে থাকতে তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব কেউ না নিতে চাইলেও সুমীর মৃত্যুরে পর দুই পরিবার তার লাশের দাফন ক্রিয়া করতে আগ্রহী।
কারণ হিসেবে জানা যায়, যে পরিবার সুমীর দাফন ক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে, সেই পরিবারের ওপরই দায়িত্ব বর্তানোর সম্ভাবনা শিশু সামিনের। আর সে দেশের নিয়মানুযায়ী শিশু পালনের মতো এই মহান দায়িত্ব পালন করবে যে পরিবার তাদের দেয়া হবে ১২০০ ডলার।
এ নিয়ে চলছে কোন্দল। এই কোন্দলের কারণে সুমীর লাশ পড়ে রয়েছে হিমঘরে।
বাবা অসুস্থ আর মা মৃত, মা বেঁচে থাকতে সামিনের ভরণপোষণের জন্য ১২০০ ডলারের মূল্য অনেক বেশি বলে বিবেচিত হতে পারত। অন্য আর দশটি শিশুর মতোই স্বপ্নের দেশ নিউইয়র্কে হেসে খেলে বেড়ে উঠতো সে।
বিষয়টি নিয়ে নিউইর্য়কের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে নানামুখি প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।