মেয়েদের টি-টুয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে সেরা বোলারদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছেন নাহিদা আক্তার। এ বাঁ-হাতি স্পিনারের লক্ষ্য র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর জায়গাটা দখল করা।
নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হবে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বমঞ্চে সেরা বোলিং করে দলের জন্য অবদান রাখার পাশাপাশি রেটিং পয়েন্ট বাড়িয়ে নিতে চান নাহিদা। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে বিকেএসপি’র দ্বাদশ শ্রেনিতে পড়ুয়া এই ক্রিকেটার জানান, বিশ্বকাপ ঘিরে ব্যক্তিগত ও দলীয় লক্ষ্যের কথা।
‘বিশ্বকাপে আমাদের গ্রুপে যারা আছে প্রায় সবার সঙ্গেই খেলার অভিজ্ঞতা আছে। যদি নিজের সহজাত বোলিং করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ দল অনেক ভালো জায়গায় চলে যাবে। আমার চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু করার। ওটার মাধ্যমে যেন র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে আসতে পারি।’
‘পাঁচ নম্বরে আসতে পেরেছি, এটা কিন্তু ভালো করেছি বলেই। আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা আমাকে উৎসাহ যোগাবে। লক্ষ্য আছে এক নম্বরে ওঠার। এশিয়া কাপ, আয়ারল্যান্ড সিরিজ, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আমরা ভালো করায় দল এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বকাপে আমরা সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলার যোগ্যতা রাখি।’
টি-টুয়েন্টি সংস্করণে বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে আছেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার মেগান স্কাট। সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে একমাত্র নাহিদাই বাঁ-হাতি স্পিনার। বাকি তিনজনের মধ্যে দুইজন অফস্পিনার ও একজন লেগস্পিনার।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সফরে টি-টুয়েন্টি দিয়ে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয় নাহিদার। বিকেএসপি থেকে উঠে আসা এই তরুণী তিন বছরের ক্যারিয়ারে ২৪ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৭ উইকেট। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও ৫ ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট নেন। ১৩ ওয়ানডে খেলে নিয়েছেন ১১ উইকেট।
ক্রিকেটে হাতেখড়ি
স্কুলে টিফিনের ফাঁকে আর বিকেলে প্রাইভেট শেষ হলে সহপাঠীদের সঙ্গে টুকটাক ক্রিকেট খেলতেন নাহিদা। ক্রিকেটারদের মতো করে কখনো অনুশীলন করা হয়নি বিকেএসপিতে ভর্তির আগে। নাহিদার ভাষায়, স্বপ্ন দেখার আগেই স্বপ্নকে জয় করেছি।
‘২০১৩ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হই। তার আগে ক্রিকেটারদের মতো প্রফেশনালি প্র্যাকটিস করিনি কখনো। বিকেএসপি থেকেই শুরু। আগে যখন স্কুলে (চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল হাই স্কুল) পড়তাম। বিকেল বেলা মাঠে ভাইয়াদের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম। যখন যে খেলা হতো সেটাই খেলতাম।’
ব্যাটসম্যান থেকে বোলার
বিকেএসপির খেলোয়াড় বাছাইয়ে নাহিদা টিকেছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবে। ব্যাটিং করতেই উপভোগ করতেন বেশি। কোচ ডলি দে পরামর্শ দিলেন ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং করতে। অলরাউন্ডার হলে বাংলাদেশ দলে খেলা সহজ হবে চিন্তা করেই বোলিং শুরু, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই সব কাজ বাঁ-হাতে করি। কেবল ডানহাতে ব্যাটিং করতাম। বিকেএসপিতে ভর্তি হই ব্যাটসম্যান হিসেবে। তখন বোলিং পারতাম না। এমনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোলিং করতে হতো। ঘুরিয়ে বল করার ব্যাপারটি জানা ছিল না। আমাদের কোচ (ডলি দে) আমাকে বলতেন ব্যাটিং না করে বোলার হতে। আমি বললাম, না ম্যাম আমার ব্যাটিং ভালো লাগে। তিনি বললেন, বোলিং করলে অলরাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবে। তার অধীনে বোলিং নিয়ে অনেক কাজ করলাম। পরে আরেক কোচ মেহেদী হাসান অনেক পরিচর্যা করেছেন। তাদের কারণেই আমি স্পিনার হতে পেরেছি। বিকেএসপিতে ভর্তির বছরই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলার সুযোগ পাই। ওই ব্যাচটার মধ্যে আমি একাই সুযোগ পাই। আবাহনীর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ৫ উইকেট পাই।’
বোলিংয়ে স্পেশালিটি
‘আমি চেষ্টা করি সবসময় লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করতে। উইকেট পাওয়া তো সবসময় ভাগ্যের ব্যাপার। ইনকামিং ডেলিভারিতে উইকেট বেশি পাই। এটা ন্যাচারালি হয়ে যায়। রঙ্গনা হেরাথ ও সাকিব আল হাসানের বোলিং দেখি। ভালো লাগে। তাদের দেখে অনেককিছু শেখার চেষ্টা করি।
উৎসাহ যখন পরিবার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরা খেলাধুলা করতে চাইলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবার। তবে নাহিদার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। খেলাধুলায় পরিবার যুগিয়েছে উৎসাহ। আর তাতেই সব সহজ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে নাহিদা মেজো। ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বসবাস। বাবা সরকারী চাকরিজীবী। আর মা গৃহিনী।