‘তুমি যাকে মুক্তি বল, যা জ্ঞানের দ্বারা হয়, আমাদের রক্তের মধ্যে তার বাধা। আমরা মানুষকে জড়িয়ে থাকি, বিশ্বাসকেও; কিছুতেই তার জট ছাড়াতে পারি নে। যতই ঘা খাই ঘুরে ফিরে আটকা পড়ি। তোমরা অনেক জানো, তাতেই তোমাদের মন ছাড়া পায়, আমরা অনেক মানি তাতেই আমাদের জীবনের শূন্য ভরে। তুমি যখন বুঝিয়ে দাও, তখন বুঝতে পারি হয়তো আমার ভুল আছে। কিন্তু ভুল বুঝতে পারা এবং ভুল ছাড়াতে পারা কি একই? লতার আঁকড়ির মতো আমাদের মমত্ব সব কিছুকেই জড়িয়ে ধরে, সেটা ভালোই হোক আর মন্দই হোক, তার পরে তাকে আর ছাড়াতে পারি না।
সংসারকে দুই হাতে জড়িয়ে নিতে হবে বলেই্ আমাদের সৃষ্টি। আমরা গাছকেও আঁকড়ে ধরি, শুকনো কুটোকেও। গুরুকেও মানতে আমাদের যতক্ষণ লাগে, ভণ্ডকে মানতেও ততক্ষণ। জাল যে আমাদের ভেতরেই্। দুঃখ থেকে আমাদের বাঁচাবে কে?’
বড় ভাই বিপ্রদাসকে কথাগুলো বলেছিলো রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ উপন্যাসের নায়িকা কুমুদিনি। উপন্যাসটি পড়ে যে কোন পাঠকেরই ভীষণ রাগ হয়। কুমু এত বুঝেও মধুসূদনের ঘরে কেন ফিরে গেল! রবীন্দ্রনাথ কেন কুমুকে যেতে দিলেন!
রবীন্দ্রনাথ কুমুকে ফিরে যেতে দিয়েছেন, কারণ বাস্তবে এমনই ঘটে থাকে। কুমু ফিরে না গেলে সেটি হত একটি অবাস্তব গল্প। কুমু যতই গভীর সংবেদনশীল এবং প্রজ্ঞাময়ী নারীই হোক না কেন, সে আমাদের এ দেশের নারী। কাজেই কুমুরা অত্যাচার মুখ বুজে সইতে ফিরে যাবেই। তাকে রবীন্দ্রনাথ ঠেকাতে পারেন না, বা তাকে ঠেকানোকে তিনি বাস্তবসম্মত মনে করেননি।
আজ থেকে একশ বছর আগের কুমু এবং এখনকার কুমুর মধ্যে কোন মর্যাদাগত এবং মানসিকতাগত পার্থক্য কি আসলে আছে? নেই। কুমুরা একাই সংসারের জালকে অক্ষুণ্ণ ও বিন্যস্ত রাখার সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে কোন প্রশ্ন আর প্রতিবাদ ও প্রস্তুতি ছাড়াই। ফলে মধূসুদনেরা সমূহ শক্তিতে ও দুর্বিনীত স্থূলতায় আগ্রাসী ভূমিকায় রয়ে যাচ্ছে আবহমান কাল ধরেই। জগৎ সংসারে কত নিয়ম বদলে গেলে, কত প্রলেতারিয়েত বুর্জোয়া হল, মানুষের জীবনধারাকে আমূল পাল্টে দিল বিজ্ঞান, নারীরা তাদের জায়গাটিতেই রয়ে গেল কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই।
সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হওয়া এবং আলোচনা হওয়া বিষয়ের মধ্যে নারী উল্লেখযোগ্য। নারীদের নিয়ে গবেষণাগুলোর সবগুলোই যে নারীর কল্যাণে হয়েছে এমন কিন্তু নয়। বিরাট সংখ্যক গবেষণা আছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য হল নারীকে কিভাবে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়, আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, আর কি কি উপায়ে নারীর সৌন্দর্য ও কমনীয়তা নিয়ে ব্যবসা করা যায়, সেগুলো আবিষ্কার করা। বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বপ্রদানকারী স্বয়ংসম্পুর্ণ দেশ আমেরিকার কথা যদি ধরি, সে দেশে নানা রকম গবেষণা বিশ্বস্ততার সঙ্গেই হয় বলে শুনেছি। সে দেশে নারী নিয়ে সকল গবেষণা কি খুব নারী কল্যাণমূলক? সে দেশের নারীদের সামাজিক ও মানসিক অবস্থার দেখলে তাদের গবেষণার অসারতার দিকটিই প্রতিফলিত হয়। আমরা ইংরেজি সিনেমায় আমেরিকার দুঃসাহসী, সৎ ও সমাজ সচেতন ও যোগ্য নারীদের দেখি। একজন এফবিআই কর্মকর্তা হিসেবে নারীকে ধুন্ধুমার যুদ্ধ করে অপরাধীকে হাতকড়া পড়ানোর দৃশ্য দেখে আমরা পুলকিত হই। আসলে প্রকৃত অবস্থাটি এমন নয়। এ দৃশ্যগুলো আসলেই কাল্পনিক। কাল্পনিক বলেই তা সুপারহিট। প্রকৃত সত্য হলো, সে দেশের নারীদের অবস্থা আমাদের নারীদের চেয়ে ভালো নয়। তারা অধিকতর প্রগতিশীলও নয়, নয় পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার যোগ্যতাসম্পন্ন। এমনকি নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী, আচরণ ইত্যাদি দিক দিয়ে সে দেশের মানুষেরা আমাদের মানুষের চেয়ে সভ্যও নয়। এটি আমাদের জন্য আত্মতৃপ্তির বিষয়। একটি দিক থেকে ওরা আমাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। সেখানকার কর্মজীবী নারীরা একই স্তরের পুরুষের চেয়ে কম মূল্য পায়। সেখানেও অত্যাচারিত নারীরা বেশিরভাগ মুখ খোলে না। আর যারা মুখ খোলে তার সামাজিক হেনস্থার শিকার হয় আমাদের মতোই। সে দেশে বেশিরভাগ নারী নিজেদের সৌন্দর্য আর পুরুষের কাছে পছন্দের হওয়াটাকেই জীবনের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য করে দেখে। নিজেদের প্রদর্শন করে বাহাবা কুড়ানোর মধ্যে তাদের সকল আত্মতৃপ্তি। এর ফলে এক অগভীর জীবনে তারা ব্যস্ত থাকে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সামাজিক নিরাপত্তা ভালো, তারা আমাদের চেয়ে অনেক বিষয়ে স্বাবলম্বী এবং প্রভাব বিস্তারকারী। তাই নারীর সামাজিক অবস্থানটি খুব আলোচিত হয়ে উঠে না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমাদের দেশে মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, নানা রকম সংকট আছে, ফলে অনেক নারীর জীবন যাত্রার দৈন্যটি প্রবলভাবে প্রকাশিত এবং পীড়াদায়ক হয়ে উঠে। অনেক কিছুতেই আমাদের উন্নতি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি, দালানকোঠা, পোশাক আশাক, চালচলন ইত্যাদি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে নারীরাও কম বেশি পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নারীর প্রতি মনোভাব খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। নারীর মানবিক অবস্থান আগের মতোই আছে, দরিদ্র সমাজে এবং পোশাকি সমাজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হয়ে দৃষ্টি হারিয়েছেন। এটি আমাদের ভেতর নাড়া দেয়, প্রশ্ন আসে, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যিনি মেধা এবং যোগ্যতায় শ্রদ্ধার্হ তাকেও যদি এ নির্যাতনের ভেতর থাকতে হয় তাহলে অনগ্রসর আর অশিক্ষিত সমাজে নারীরা কেমন আছে।
নারীর বিচরণ ক্ষেত্র আগের চেয়ে বেড়েছে, নিঃসন্দেহে। কিন্তু তাতে মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন কোন প্রমান দেখা যাচ্ছে না। বরং সর্বত্রই নারীর অবমাননার খবর আছে। আগে শুধু ঘরেই নির্যাতিত হতো তারা এখন নির্যাতিত হচ্ছে শিক্ষালয়ে, কর্মক্ষেত্রে, পথে-ঘাটে। নারীর বিচরণ ক্ষেত্র বাড়ছে, বাড়ছে নির্যাতন ক্ষেত্র।
নির্যাতন বিষয়টিকে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা হয়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যেভাবেই দেখা হোক না কেন, সকল নির্যাতনই মানসিক পীড়ায় পরিণত হয়। শুধু পার্থক্য থাকে নির্যাতনকারীর স্থূলতায়। পীড়াদায়ক কথা বলা, একটা ধাক্কা দেয়া বা চড় দেয়া, আপাদমস্তক পেটানো, এসিডদগ্ধ করা ইত্যাদি নির্যাতনের প্রকার মাত্র। একজন দর্শক হিসেবে এগুলোকে কম নির্যাতন বা বেশি নির্যাতন মনে হতে পারে। কিন্তু নির্যাতিতের কাছে তার প্রতি অন্যায়ের মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রনা অপরিসীম। এর প্রমান হলো, একজন মানুষ হয়েতো একটি দুর্ব্যবহারের কারণে আত্মহত্যা করে। যেটিকে বাইরে থেকে আত্মহ্ত্যা করার কারণ বলে মনে নাও হতে পারে। কিন্তু যার প্রতি আচরণটি করা হয়েছে তার মনোজাগতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অনেক তাৎপর্যবহ, এর মনস্তাত্ত্বিক পীড়া তার কাছে পর্বত সমান এবং যে মানুষটি তার কাছের মানুষকে নির্যাতন করে সে খুব ভালো ভাবেই জানে, তাকে কিভাবে নির্যাতন করা হলে তার জন্য সেটা সর্বোচ্চ হয়ে ওঠে। কাজেই নির্যাতনের ধরন দেখে এটাকে ছোট বা বড় বলার কোন সুযোগ নেই।
সভ্যতার একটি বাস্তবতা হলো এটি অনেক কিছুর সংজ্ঞা বদলে দেয়। বদলে দেয় অভাবের সংজ্ঞা, বদলে যায় চাহিদার ধরন। এখন পুরুষের মতো নারীর জীবনেরও চাহিদার পরিবর্তন ঘটেছে। প্রত্যাশার মাত্রায় যোগ হয়েছে নানা নতুন উপকরণ। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই নারীর সামাজিক মান বিষয়ে আলোচনা হওয়া যুক্তিসংগত। আগে নারীরা যতোটুকুতে খুশী হতো এখন তাতে খুশী হবে না। এটাই স্বাভাবিক্। আমাদের শৈশবকালে আশির দশকে আমাদের চাওয়া ছিল, ভাঙা কাঁচের গ্লাস, ছেঁড়া জুতো বিক্রি করে হাওয়াই মিঠাই খাওয়া। কৈশোরে একটি আলাদা পড়ার টেবিল, নিজস্ব জিনিস রাখার জন্য ছোট একটি বাক্স আর মনের কথা লেখার মতো পুরোনো একটি ডায়েরি পেলেই আমরা হয়ে উঠতাম স্বয়ংসর্পুর্ণ। এখনকার শিশু কিশোরদের প্রত্যাশা অনেক বদলে গেছে। নিজের জন্য একটি আলাদা অত্যাধুনিক মোবাইল, অবস্থা বিশেষে একটি ল্যাপটপে পৌঁছেছে। তবে নারীদের প্রত্যাশা আগের মতো হবে না সেটিও তো সমানভাবে সত্যি। কি সে প্রত্যাশা? সম্মানজনক জীবন, আনন্দ পাওয়ার সুযোগ, নিজের সম্ভাবনাগুলোর বিকাশের সুযোগ এগুলোই নারীর প্রত্যাশা। কিন্তু নারীর প্রত্যাশার কথা উঠলেই সমাজের মানুষগুলোর কপালে ভাঁজ পড়ে, মনটা বিষিয়ে উঠে, সমস্ত রসবোধ তিক্ততায় ছেয়ে যায়। তারা অস্ফুট স্বরে বলে, কি জ্বালা! নারীকে তো তার দায়িত্ব নিয়েই সুখে থাকা উচিত।
পৃথিবী এগিয়ে যাবে, পুরুষরা নিজেদের আরও বিকশিত করতে থাকবে। কিন্তু নারীর শ্বাশ্বত ঐতিহ্যের বাইরে যেতে পারবে না। গরুর কাঁধ থেকে জোয়াল নেমেছে। কিন্তু নারীর কাঁধ থেকে জোয়াল তো নামেইনি বরং নানা ধরণের দাবী দাওয়ার গুরুভার তার উপর চাপছে ক্রমাগত। তারা ধুপের মতো পুড়ে গন্ধ বিলিয়ে যাবে। নিজে শিক্ষিত প্রাজ্ঞ না হয়েও সন্তানের সর্বোচ্চ জ্ঞানগর্ভ শিক্ষাটি মাকেই দিতে হবে। কি আমাদের বিচিত্র স্ববিরোধিতা!
অনেক নারী আজকাল আধুনিক পোশাক পরছেন। অনেকেই কালো বা বাহারি বোরখার আড়ালে চর্চিত মুখশ্রী ঢেকে হেঁটে চলেছেন সমাজ চত্তরে। এগুলোর কোনটিই আসলে নারীর অগ্রসরতার কোন মানদণ্ড নয়। এগুলো যে অন্তসারশূন্য বা শুধুই আবরণসর্বস্ব তার প্রমান প্রতিদিনের খবর। আমাদের সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে রয়েছে নারীর প্রতি নির্মমতা, নৃশংসতা, বর্বরতার খবর। যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও হত্যা, ধর্ষণ, এবং তারপর হত্যা, ফতোয়া দিয়ে অপরিমেয় পীড়াদায়ক অপমান, নিত্যদিনের নির্যাতন, আত্মহত্যায় বাধ্য করা ইত্যাদি নানা ঘটনা। এসব খবর পড়ে সমাজের মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী নারীদের সম্পর্কে সন্দেহ হয়। মনে হয় তাদের সাফল্যময় মুখাবয়বের স্নিগ্ধ ভাঁজের নিচে ঢেকে রেখেছেন ভয়ানক দুঃসহ অভিজ্ঞতা, সূক্ষ্ম অপমান।
নারীর আপাতদৃশ্য পদসঞ্চালন তার প্রকৃত অবস্থার কোন উন্নতি করতে পারেনি। নারীর অসহায় অবস্থার কোন উন্নয়ন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, কি কারণ এ অসহায়ত্বের?
নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে যদি মানবতাবাদী দৃষ্টিতে দেখা যায় তাহলে বোঝা যায় এগুলোর কারণ সমাজের গভীরে প্রোথিত। সমাজ মানসের গঠন ও চর্চায় এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো নারীকে দুর্বল করে রাখছে, প্রতিনিয়ত দুর্বিষহ বিপর্যয়ে ফেলছে।
প্রথমেই মানুষ হিসেবে নারীর বেড়ে উঠার বিষয়টি বিবেচনা করা যাক।
যে কোন সমাজেই মানুষ সে সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতির আবহে বড় হয়ে উঠে। সে বড় হবার প্রক্রিয়ায় সমাজের নিয়ম কানুনগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করতে শুরু করে। আমাদের সমাজের নারীদের এ বড় হবার প্রক্রিয়াটি সম্ভবত অনুপযোগী। নারীর ভূমিকা পালনের বিষয়টি বিবেচনা করা যাক। নারী এখন কর্মজীবী এবং গৃহিনী। যিনি কর্মজীবী তিনিও গৃহিনী। কর্মজীবী নারীকে ঘর আর বাইরে দুটোই সামলাতে হচ্ছে। কাজটি জটিল এবং শ্রমসাপেক্ষ। এ জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা। নারীরা অনেকটা নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজনেরই এ রকম সংগ্রামী জীবন বেছে নিয়েছেন। তাকে পরিবার, সমাজ কতখানি সাহায্য করছে তা ভেবে দেখবার বিষয়।
নারীকে সাহায্য করার মানে তার কাজকে এগিয়ে দেয়া নয়। বরং এ কাজের গুরুভার নেয়ার মতো যোগ্যতা নারীর মধ্যে তৈরি হচ্ছে কি না সে বিষয়টি নজরে আনা। তাকে যদি এতসব দায়িত্ব পালন করতেই হয় সেটি যথাযোগ্য যোগ্যতা নিয়েই পালন করা উচিত। যোগ্যতা অর্জনের প্রক্রিয়া ঘর থেকেই শুরু হয়। মেয়েদের প্রতি পরিবারের প্রত্যাশা এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। বাবা মাকে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে চিন্তা করতে হবে যে আমার ছেলেটির মতো মেয়েটির জন্যও অপেক্ষা করে আছে বিপুল পৃথিবীর ব্যাপক দায় ও বাস্তবতা। এ দায় কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় বেশি।
কাজেই মেয়েদের কাছে প্রত্যাশা প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে। তাকে বুঝতে দিতে হবে, সমাজের একটি ছেলের মতোই তাকে সংসারের হাল ধরতে হবে, যাতে সে নির্ভরশীল মানসিকতা নিয়ে বড় না হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী স্বয়ংসম্পুর্ণ। এ স্বয়ংসম্পুর্ণতা ঘর সামলাতে, সন্তান প্রতিপালনে। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন অর্জন, আবেগীয় আত্ননির্ভরতা, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং নিজেকে যোগ্য ভাবার ক্ষমতা এখনও নারীরা অর্জন করেনি। এর বড় কারণ হলো নারীর কাছে কম বয়স থেকে এগুলো প্রত্যাশা করা হয় না। ছেলের কাছে বাবা মা গৃহকর্মে নৈপুণ্য প্রত্যাশা করেন না, ফলে তারা এটি শেখে না। তেমনি মেয়ের কাছে দায়িত্বপালন, উপার্জন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগীয় স্থিতি অর্জন ইত্যাদি প্রত্যাশা করেন না। ফলে তারাও এগুলো শিখে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নারীর পেশাগত জীবনকে পেশাগত মানসিকতা নিয়ে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে উঠেনি নারী বা পুরুষের কারোরই। ‘এগুলো না হলেও চলতো’, এমন একটা মানসিকতা এখনও নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে এখনও প্রবল।
কিন্তু নারীর যোগ্য হয়ে তৈরি হওয়ার প্রয়োজনটি শুধু নারীর জন্য নয়, প্রয়োজন একটি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং একটি মানবিকভাবে সহনশীল সমাজের জন্য। নারীর কাছে এগুলো পরিবারকে এবং সমাজকে প্রত্যাশা করতে হবে। এ প্রত্যাশাটি শুরু করবেন বাবা মায়েরা।
চলবে…
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)