বিচারের সময় ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করার আইন পরিবর্তনে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রধান বিচাপরপতির আহবানে সাড়া দিতে প্রস্তুত নারীসমাজ। নারী নেত্রীরা বলছেন, কথাগুলো অনেক আগে থেকেই তারা বলছেন, এখন প্রধান বিচারপতি নিজেই এ নিয়ে কথা বলায় আন্দোলন জোরদার হবে। এক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতিকেও পাশে চেয়েছেন তারা।
২৬ মে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছিলেন, একজন মহিলার সম্ভ্রম নষ্ট হলো এবং তারই চরিত্র নিয়ে আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করবে সবার সামনে, এর চেয়ে চেয়ে মর্মান্তিক, দুঃখজনক আর কী হতে পারে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এই বিষয়ে যে আইনগুলো আছে তা অনেক ভালো তবে কিছু কিছু আইন এখনও সেই উপনিবেশবাদের চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করে। তিনি মনে করেন এই কালো আইনগুলো তুলে ফেলা উচিত।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং নিরাপত্তা হেফাজতে যৌন হয়রানি হচ্ছে, ভরা মজলিসে এভাবেই বলেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। একই সঙ্গে তিনি নারী নেত্রীদের আহ্বান জানিয়েছেন, নারী নির্যাতন আইন পরিবর্তনে আইনপ্রণেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য।
খোদ প্রধান বিচারপতির মুখ থেকে আইনের দুর্বলতার বিষয়টি বের হয়ে আসায় তাকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবিরা বলছেন, নারী নির্যাতন আইনের দুর্বলতা সংশোধনের এটাই সুযোগ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী সুলতানা কামাল বলেন, একজন প্রধান বিচারপতি যে এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করছেন, কথা বলছেন সেটা তাদের জন্য খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক। অবশ্যই তারা এই সিুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। তিনি আরো বলেন, এই সমস্ত আইনের মধ্যে পরিবর্তন, সংশোধন আনা উচিত। সেই সঙ্গে ধর্ষণের বিচারটা যেন কক্ষের ভেতরে হয়, যেটাকে ‘অন ক্যামেরা ট্রায়াল’ বলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
আইনজীবি এলিনা খান বলেন, সাক্ষ্য আইনকে পরিবর্তন করা জরুরি দুই ভাবে। এক হচ্ছে মানবাধিকার কর্মী, নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী,সমাজকর্মী এবং প্রসিকিউসনের পক্ষ থেকে আইনজীবী , বিচারপতি এবং বিচারকদের নিয়ে একটি সেমিনার করতে হবে। তাদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে তার ভিত্তিতে একটা সংশোধন আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মেয়েদের চরিত্র নিয়ে বেশি কথা বলার জন্য যা মনে আসে তাই জিজ্ঞেস করা হয়। এই বিষয়টি যেন সংশোধন করা হয় তা নিয়েই মূলত তাদের আন্দোলন।
আইনজীবিরা বলেন, নারী সত্যিই ধর্ষিত কিংবা নির্যাতিত হয়েছে কিনা সেটা প্রমানের দায় তার নয় বরং নির্যাতনকারীরই প্রমান করতে হবে নির্যাতন করেননি।
প্রধান বিচারপতির কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিশিষ্ট এই আইনজীবিরা দেশের প্রত্যেক আইনজীবিকে বছরে দু’টো করে দরিদ্র নারীদের মামলা বিনা-পয়সায় করে দেওয়ার আহ্বান জানান।