আজ ১৬ জুন, নারায়ণগঞ্জ বোমা হামলা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০১ সালের এই দিনে নগরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে নৃশংস বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মী ও নারীসহ ২০ জন নিহত হন। আহত হন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ঘটনার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ওই হামলার বিচার হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দিন কাটাচ্ছে অর্থ সংকটে।
২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে শক্তিশালী বোমা হামলায় আহত অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে। বোমা হামলার ঘটনার পরদিনই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেন।
চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। ওই সময় বোমা হামলায় নিহত ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের ছেলে কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান ও তার দুই ভাইসহ অনেককে আসামি করে মামলা করেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ২৭ জনকে ও ২০১৪ সলে হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ পত্র দখিল করে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন।
আসামিদের মধ্যে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপর বোমা হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
কারাগারে রয়েছে আদালতে একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল ও আব্দুস সালাম পিন্টু। ভারতে গ্রেপ্তার রয়েছে হরকাতুল জিহাদ জঙ্গি দুই ভাই আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। ১০২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ছাড়া কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি। এতে সংশয় ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিচার নিয়ে।
দীর্ঘ ১৭ বছরে ২০ হত্যা মামলার বিচার না পাওয়ায় শংকিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ নিহতের স্বজনরা। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নানা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি করেন তারা।
বোমা হামলার ঘটনার দায়ের করা দু’টি মামলা এখন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য আছে জানিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, এক মাসে যদি ৮০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয় তবে ৬ মাসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।
মামলার দ্রুত বিচার নিস্পত্তি করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে এমন প্রত্যাশা নারায়ণগঞ্জবাসীরও।