অর্থের বিনিময়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহিনী র্যাব দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পৃথিবী থেকে সরাতে নারায়ণগঞ্জে অপরহরণের পর একে একে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল সাতজনকে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ২৬ আসামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। আরও ৯ আসামীর বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয়েছে। প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় শুরুতে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এ রায় প্রমাণ করেছে, অর্থ আর ক্ষমতার শক্তির চেয়ে ন্যায়ের শক্তি অনেক বড়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েতের দেয়া রায় দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নতুন এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এ রায়ে আশা দেখছেন এমন আলোচিত আরো অনেক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা। কাকতালীয় হলেও সাত খুনের রায় ঘোষণার দিনই টাঙ্গাইল-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা) এবং তার তিন ভাইকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। তারা সবাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রানা এবং তার ভাইদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ফারুক আহমেদকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে সব রহস্য। তদন্ত শেষে রানা এবং তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। শুধু ফারুক হত্যাই নয়, রানা এবং তার ভাইদের নামে রয়েছে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ। এরমধ্যে টাঙ্গাইলের সাবেক পৌর কাউন্সিলর রুমি চৌধুরী হত্যা, টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি খোরশেদ আলী খোকন ও সাধারণ সম্পাদক শামিম তালুকদার হত্যা উল্লেখযোগ্য। ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ ক্ষমতা এবং অর্থের প্রভাবে এসব হত্যাকাণ্ড বারবার ধামাচাপা দিয়েছে রানা এবং তাদের ভাইদের নেতৃত্বে খান পরিবার। তবে সবকিছুর পরও দল থেকে তাদের বহিষ্কারের পর আশা দেখছেন টাঙ্গাইলের মানুষ। তাদেরকে আরো আশাবাদী করেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য। রায় হওয়ার পর তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানুষ ন্যায়বিচার পায়, সাত খুন মামলার রায় তারই প্রমাণ। আমরাও আশা দেখি, শুধু নারায়নগঞ্জ নয়; এমন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ডেই। তাহলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে, নিশ্চিত হবে ‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয়।’