বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রায় অর্ধশতক পার করছে। কিন্তু রাজনৈতিক আচরণে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে দৈন্যতা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের অনেক নামই পাল্টে দিতে হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে সেটা সাবেক উপনিবেশিক শাসন শোষণকে ত্যাগ করার মানসিকতা থেকে হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সবসময় আদর্শিক হয়নি। স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধারণ না করেও এদেশে রাজনীতি করে ক্ষমতাসীন হয়েছে একাধিক দল। বারবার সামরিক শাসনও জারি হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নাম তাদের নামে, তাদের নেতাদের নামে করেছে। পরে অন্য দল ক্ষমতায় এসে সেটা আবার পাল্টে দিয়েছে। এভাবে বারবার নাম পরিবর্তন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দৈন্যদশাকেও প্রকটিত করে এবং এ পরিবর্তন কোনোভাবেই শোভন মানসিকতার পরিচায়ক নয়। কিছুক্ষেত্রে অবশ্য নাম পরিবর্তনের সঙ্গত কারণ আছে। পাকিস্তান আমলের জিন্নাহ এভিনিউ স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে গেছে। কিন্তু পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তনের হিড়িক পড়ে। এই ধারা বিএনপি চালু করে, আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা অব্যাহত রেখেছে। আমরা মনে করি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। যতদিন এই দেশ থাকবে, থাকবে বাংলাদেশ, ততদিন কেউ তার নাম মুছে দিতে পারবে না। যার নাম এই দেশের প্রতিটি কণায় কণায় জাজ্বল্যমান, তাকে কোনো স্থাপনা বা স্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা কতোটা যৌক্তিক? এতে করে কি এই মহান নেতার মর্যাদা বেড়েছে? বরং আমরা দেখি, তার সঙ্গে প্রতিতুলনা করে তারই তুলনায় ক্ষুদ্রস্য ক্ষুদ্র ব্যক্তির নামে স্থাপনার নামকরণ হওয়াতে তার নামের বরং অমর্যাদাই হয়েছে। পিরোজপুরের জিয়ানগরকে তার আদিনাম ইন্দুরকানিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পর গতকাল বিএনপির এক নেতা ঢাকার নাম বদলে জিয়া সিটি করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এটি একটি হাস্যকর রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ। এই ঘোষণা যারা বিএনপির রাজনীতি করেন তাদের নিকটও বালখিল্য আচরণ বলে মনে হবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এই নাম পরিবর্তন বা পরিবর্তনের ঘোষণা জনগণের নিকট দলগুলোর নিম্ন সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরে, এ্টা কেউ ভাবছে না। অথচ তারা দাবি করেন, তারা জনগণের মনের কথা বোঝেন। দেশের আপামর মানুষের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর এই বালকসুলভ মানসিকতা কোনো সুস্থ অর্থ বহন করে না। অচিরেই নামবদলের নিম্নমানের রুচিহীন প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া দরকার। প্রয়োজনে আইন করে এই নিম্নরুচির সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করা দরকার। তবে আইন করে মানুষের সাংস্কৃতিক মান বদল করা যায় না। এক্ষেত্রে শুভ বুদ্ধি উদয়ের অপেক্ষা ছাড়া আপাত কিছু করার নাই। আমরা আশা করি, মানুষের জন্য রাজনীতি করা দলগুলো মানুষের প্রকৃত সমস্যা ও সংকট নিয়ে রাজনীতি করবে। নাম বদলের রাজনীতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখে না।