কেবল আকাশপথেই নাপোলি থেকে বুয়েন্স আয়ার্সের দূরত্ব ৭ হাজার মাইল। কিন্তু শোক সংবাদের তো কোনো পাখা থাকে না, ঠিক বাতাসে ভেসে ভেসে হৃদয় ভাঙে ভালোবাসার মানুষদের। ইন্টারেনেটের যুগে খারাপ খবর তো আরও আগেই পৌঁছায়। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে যখন মৃত ঘোষণা করলেন চিকিৎসকরা, দ্রুতই জাদুকরের চিরবিদায়ের খবর পৌঁছে গেল নাপোলিতে।
ম্যারাডোনা-আর্জেন্টিনা-নাপোলি, ফুটবলে এ তিনটি নামকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে একক নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ম্যারাডোনা যখন কিংবদন্তি, সেটির বীজটা যে পোতা হয়েছে দুবছর আগেই, ইতালির নেপলস শহরে। প্রায় অখ্যাত, ধুঁকতে থাকা এক ক্লাবে নিজের কৃপা ছড়িয়ে দেন ফুটবল-ঈশ্বর। নাপোলি ইউরোপিয়ান ফুটবলে হয়ে ওঠে এক দাপুটে দল।
দলবদলের তখনকার রেকর্ড গড়ে ১৯৮৪ সালে বার্সা থেকে নাপোলিতে আসেন ম্যারাডোনা। কোকেনের নেশায় বুঁদ হয়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞাসহ ছিলেন ৮ বছর। মাদকের ফাঁদে নিজের ক্যারিয়ার নিজ হাতে কবর দেয়ার আগ পর্যন্ত যতদিন ছিলেন, দুপায়ে নাপোলিকে এনে দিয়েছেন সাফল্য।
১৯৮৭ সালে ম্যারাডোনার নেতৃত্বে প্রথমবার নিজেদের সিরি আ শিরোপা জেতে ক্লাবটি, ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার। এর মাঝে দুই মৌসুমে দলটি ছিল লিগে রানার্সআপ। ১৯৮৯ সালে জিতে নেয় নিজেদের প্রথম উয়েফা সুপার কাপও। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পজিশনে খেলে ১১৫ গোল নিয়ে নাপোলির এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা ম্যারাডোনাই।
সেই ম্যারাডোনার বিদায়ে আর্জেন্টিনোস থেকে বোকা জুনিয়র্সে শোক চলছে। কিন্তু নাপোলির হৃদয়ে রক্তক্ষরণটা সবচেয়ে বেশি। নিজেদের প্রিয় ঈশ্বরের বিদায়ের খবর শোনার পর নাপোলির সান পাওলো স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন অসংখ্য ভক্ত। রাতের অন্ধকারকে আতশবাজি আর মোমের আলোয় বিদীর্ণ করে নিজেদের ভালোবাসার জানান দিতে থাকেন ভক্ত-সমর্থকরা।
প্রিয় ম্যারাডোনার বিদায়ে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে নেপলসে। মহাতারকার চিরবিদায় নিয়ে বলতে গিয়ে শোক ঢাকতে পারেননি মুখপাত্র স্বয়ং, ‘সবাই অপেক্ষায় আছে আমরা কী বলি সেটা শোনার, কিন্তু নিজেদের শোককে কী করে প্রকাশ করতে হয় সেই ভাষা যে আমাদের জানা নেই। এখন সময় শুধু কান্নার। তারপরও যদি আমরা কিছু বলতে পারি।’
‘আমরা শোকে পাথর হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে বক্সার আমাদের ঘুষি মেরে ফেলে দিয়েছে। ক্লাব আর শহরের সবাই আজ শোকে স্তব্ধ।’
পিসার হয়ে ম্যারাডোনার বিপক্ষে খেলেছেন পল এলিয়ট। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বিবিসি রেডিওকে জানিয়েছেন কীভাবে নাপোলিকে বদলে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা, ‘সাউথ ইতালির খুবই ছোট একটা শহর নাপোলি। কিন্তু তাদের পুরো পৃথিবী ম্যারাডোনা আর নাপোলিকে ঘিরে আবর্তিত।’
‘যখন তিনি ক্লাবটিতে এসেছিলেন, কেউ যদি সেই মুহূর্তটা দেখতে পেতো তাহলে বুঝতে পারতো একজন মানুষ কতটা সুস্পষ্ট প্রভাব রেখে গিয়েছিলেন। ম্যারাডোনা ছিলেন তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি, যিনি সবাইকে দিয়েছিলেন আশা।’