নাপিত হিসেবে দিনে মানুষের চুল কাটেন তিনি। আর রাতের অবসরে তৈরি করেন ভাস্কর্য। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজের ফাঁকে বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের কাঠের ভাস্কর্য তৈরি করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জয়পুরহাটের ফকির আনোয়ার হোসেন। এখন তাকে নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শূন্যরেখা গ্রামের ছোট্ট জরাজীর্ণ খুপরি ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন আনোয়ার হোসেন। পেশায় একজন নাপিত। এ কাজের আয় দিয়েই চলে তার সংসার। রাতের অবসরে কাঠ দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের ভাস্কর্য। তার তৈরি এসব ভাস্কর্য সেই খুপরি ঘরে সাজিয়ে রাখেন। তবে ভাস্কর্যগুলো বিক্রির জন্য নয়, শুধু প্রদর্শনের জন্য তৈরি করেন আনোয়ার।
সরেজমিনে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, লালন শাহ্, বাবা শেখ ফরিদসহ বেশ কিছু গুণী ব্যক্তির কাঠের তৈরি ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে তার ঘরে।
তিনি এখন ঝড়ে ভেঙেপড়া কৃষ্ণচূড়া গাছের গোড়ায় হাঁতুড়ি বাটাল দিয়ে লালনের ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার এই ভাস্কর্য দেখতে জয়পুরহাট-হিলি সড়ক হয়ে যে সকল পথচারী নিয়মিত চলাচল করেন, তাদের অনেকেই এখানে আসেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তার নিপুণ হাতের কাজ দেখে পুলকিত হন আগন্তুক দর্শনার্থীরা।
তাদেরই একজন আরিফুর রহমান বলেন, এই সড়ক দিয়েই আমাকে সব সময় যাতায়াত করতে হয়। যাওয়ার পথে অথবা ফেরার পথে আমি এখানে দাঁড়াই এবং তার কাজ মনযোগ দিয়ে দেখি। খুব যত্ন দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করেন তিনি। একটি পছন্দের ভাস্কর্য তার কাছ থেকে কিনতে চেয়েছিলাম; কিন্তু বিক্রি করতে রাজি হননি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সংসার চালানোর জন্য নাপিতের কাজ করি আর চিত্তের ক্ষুধা মেটানোর জন্য অবসরে পেলেই ভাস্কর্য তৈরির কাজ করি। এটা নেহাতই শখের বশে, বিক্রির জন্য নয়। আমার টাকা-পয়সা নেই। তবে না খেয়ে থাকতে হয় না।’
‘‘ইচ্ছা আছে, মিনি লালন একাডেমি বানাবো। সেখানে আমার তৈরি ভাস্কর্যগুলো প্রদর্শনের জন্য রেখে দেবো। যেন আমার মৃত্যুর পরও আমাকে মানুষ স্মরণে রাখে।’’
গুণি এই ভাস্কর্য শিল্পীকে প্রয়োজনীয় অর্থ, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে তিনি জাতীয় পর্যায়েও অবদান রাখতে পারে এমনটাই মনে করছেন এলাকার সংস্কৃতি বোদ্ধারা।