আজ পবিত্র ঈদুল আযহা। সারাদেশে মুসলমানরা দিনটি যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করছে। গতবারের মতো এবারও করোনার কারণে ভিন্ন আবহে পালিত হচ্ছে ঈদ।
করোনা নিয়ন্ত্রণে নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে। অনেকেই যাননি গ্রামে। আবার অনেকেই করোনা ভীতিকে উপেক্ষা করেই শহর ছেড়ে ছুটেছেন গ্রামে।
রাজধানী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ঈদুল আযহার পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।
সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ ক্বারী কাজী মাসুদুর রহমান।
সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ ক্বারী হাবিবুর রহমান মেশকাত।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।
সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন জাতীয় মসজিদের প্রধান খাদেম মুক্কাব্বির মো. শহিদুল্লাহ।
চট্টগ্রামে মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন লালদীঘি শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। নগরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে সকাল সাড়ে ৭টায় সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা মসজিদ ঈদগাহ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ ও চসিক মা আয়েশা সিদ্দিকা জামে মসজিদে (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন) ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জামাতের আগে বয়ানে কোরবানির তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। নামাজ শেষে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করেন ইমাম।
নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়।
করোনার কারণে নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকলেও পরস্পরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী ও সারাবিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পৃথক বাণীতে তারা মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।
কঠিন এ সময়ে দেশের আপামর জনগণের প্রতি কোরবানির মর্মার্থ অনুধাবন করে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। তিনি আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
ঈদুল আযহার এই দিনে তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এক সংকটময় সময়ে ঈদুল আযহা উদযাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনগণকে সব সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখছে।
ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) থেকে। ঈদের তিন দিন (২০, ২১ ও ২২ জুলাই) ছুটি শেষে ২৩ ও ২৪ জুলাই সাপ্তাহিক (শুক্র ও শনিবার) ছুটি। ফলে ঈদের ছুটি মিলে টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সবাই।
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
ঈদ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্বারা যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় সে বিষয়ে সব রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও আকুন্ঠ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ঈদের নামাজের পর আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশায় মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন।