পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে রাস্তায় আনফিট গাড়ি কীভাবে চলে, এ প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বিআরটিএ এক্ষেত্রে কী করে সে প্রশ্নও তুলেছেন হাইকোর্ট।
সারাদেশের অনিবন্ধিত, আনফিট যানবাহন ও লাইসেন্সহীন চালকদের বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।
আজ সোমবার শুনানির সময় আদালত বলেন, পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে আনফিট গাড়ি রাস্তায় কীভাবে চলে? রাস্তায় এত মানুষ মরছে, বিবেক একটুও জাগে না? এভাবে চলতে পারে না। আমাদের একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে।
দেশের জন্য সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে হাইকোর্ট বলেন: প্লিজ দেশের জন্য কিছু করুন। আমাদের সবারই দায়িত্ব আছে। সবাইকেই দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
আদালত একপর্যায়ে বিআরটিএ’কে উদ্দেশ্য করে বলেন: বিআরটিএ কী করে? বিআরটিএকে কেন কোর্টে আসতে হয়? আর কোর্টকে কেন বিআরটিএ’র কাজ নিয়ে আদেশ দিতে হবে? আপনাদেরতো দায়িত্ব রয়েছে।
আজ শুনানির শেষপর্যায়ে আদালত বলেন: এ দেশটাকে ভালবাসলে, দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেতে হলে আমাদের অবশ্যই (রুল অব ল’) আইনের শাসনের বাস্তবায়ন করতে হবে।
এরপর আদালত তার আদেশে সারাদেশের নিবন্ধিত কিন্তু ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়ি এবং লাইসেন্স নবায়ন না করা চালকের বিস্তারিত তথ্য দিতে নির্দেশ দেন।
এছাড়া ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়ি এবং লাইসেন্স নবায়ন না করা চালকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আগামী এক মাসের মধ্যে আদালতকে জানাতে বিআরটিএ’র প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। এবং এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
আদালতের তলবে বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানী হাইকোর্টে হাজির হওয়ার পর আজ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক। বিআরটিএ’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মঈন ফিরোজী ও রাফিউল ইসলাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।
আজ আদালতে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে জানান হয় সারাদেশে ফিটনেস ডিফল্ডার গাড়ি রয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬৯টি। এরপর আদালত বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ হাইকোর্ট রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সড়কে চলা ফিটনেস ও নিবন্ধনহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সেই সাথে বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানীকে আদালতে হাজির হয়ে ফিটনেস ও নিবন্ধনহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সহীন চালকের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছিল।
সেই সাথে আদালত ঐদিন রুল জারি করেছিলেন। রুলে ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনহীন যান চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া যান চালানো রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান।
সেই সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার সম্বলিত সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের চেতনা বাস্তবায়নে মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ সহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন কঠোরভাবে মেনে চলতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, বিআরটিএ চেয়ারম্যানসহ ৭ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেন আদালত।
গত ২৩ মার্চ একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘নো ফিটনেস ডক’স, ইয়েট রানিং’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। এরপর আদালত রুলসহ আদেশ দেন।