চট্টগ্রাম থেকে: নতুন বল হাতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আব্দুর রাজ্জাক ও নাঈম হাসান। অভিজ্ঞতায় দুজন দুই বিন্দুর, সোমবার মিলে গেলেন একবিন্দুতে। একজন প্রথমবার ডাক পেয়ে জাতীয় দলের অনুশীলনে, অন্যজন ফিরেছেন চার বছরের উপেক্ষা শেষে। দুজনেই লিটন দাসকে জোরের উপর বল ছুঁড়লেন কিছুক্ষণ, ডেলিভারির ভঙ্গিটা অবশ্য ভিন্ন। ধরণটাও, একজন বাঁহাতি স্পিনার আরেকজন যে ডানহাতি অফস্পিনার। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট হতে যাচ্ছে স্পিননির্ভর। নেটে ঠিকঠাক বোলিং করে যেতে পারলে সাগরিকার এই ভেন্যুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাদা পোশাকে নামার সুযোগ হতে পারে তাদের।
চার বছর আগে রাজ্জাক সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন এই সাগরিকায়। ফেরাটা এখানে হলে তার জন্য স্মরণীয়ই হবে। যেখানে থেমেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করতে পারবেন। নাঈমের অভিষেক হলে সেটিও হবে রোমাঞ্চকর। ঘরোয়া ক্রিকেটের তিন আসর এনসিএল, বিসিএল ও বিপিএলে অভিষেক হয়েছিল এই সাগরিকার তীরেই। আরও একবার অভিষেকের আশা নিয়ে নিউজিল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছেন বন্দরনগরীর ঘরের ছেলে নাঈম। মাত্র ১৭ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় কদিন আগেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা স্পিনার। নিউজিল্যান্ডে সাইফ-আফিফরা যখন যুব বিশ্বকাপের স্থান নির্ধারণী রাউন্ড খেলছে, তখন নাঈম বড়দের মঞ্চে নেমে যাওয়ার অপেক্ষায়।
রাজ্জাক যখন বিকেএসপির পাঠ শেষ করে জাতীয় দলে ঢোকার অপেক্ষায়, নাঈমের তখন জন্ম চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পরিবারে। দুজনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান দ্বিগুণ। নেটে থাকা তাইজুল-সানজামুলরাও বয়সে অনেক বড়। যাদের খেলা দেখে বড় হয়েছেন, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ দলে থাকতে পেরে কেমন লাগছে নাঈমের?
‘অনেক ভাল। ওনারা সবাই অভিজ্ঞ, অনেককিছু শেখার আছে। চেষ্টা করব সবকিছু শেখার।’ কৈশোরের আবর্তে থাকা নাঈমের সরল আলাপচারিতা।
চুপচাপ স্বভাবের নাঈম কথা শেষ করেন ছোট ছোট বাক্যে। প্রশ্নের উত্তরে আরও কিছু যে বলা উচিত সেটি নিজেও অনুভব করেন। সেটি টের পাওয়া যায় এই তরুণের অভিব্যক্তি দেখে। মনের কথাগুলো ঠিক কণ্ঠনালী দিয়ে বেরিয়ে আসে না এই যা! চলন-বলনে ওই যে কৈশোরের ছাপটা স্পষ্টই। ‘টেস্ট অভিষেক’ প্রসঙ্গ উঠতেই অবশ্য একগাল হেসে দিলেন।
‘এই মাঠে এনসিএল, বিসিএল, বিপিএল; সব ডেব্যু হয়েছে। সুযোগ পেলে নিজের শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করব। ওরকম উইকেট তো কপালের ওপর, উইকেট কী হবে জানি না। আমি চেষ্টা করব আমার যে বৈচিত্র্য, শক্তির জায়গা আছে, তা কাজে লাগানোর।’
৬ ফুট উচ্চতার নাঈম উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করতে পারেন বলেই নির্বাচকদের মন জয় করতে পেরেছেন মাত্র ১৭ বছর বয়সেই। নাঈমও এটিকে সুবিধা আদায়ের মূল অস্ত্রই ভাবেন। অবশ্য নিজের শক্তির জায়গা নিয়ে প্রথমে জানাতে চাননি। পরে বললেন, ‘হ্যাঁ, বাউন্সটা ভাল পাই।। বাংলাদেশের উইকেটে টার্ন পাওয়া যায়। উইকেট বুঝে বল করতে হবে। বাড়তি বাউন্স পাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’
মনে হতে পারে নাঈম হুট করে চলে এসেছেন জাতীয় দলে। আসলে তেমনও নয়। আগে প্রমাণ দিতে হয়েছে ইমার্জিং কাপে। এশিয়ার দলগুলো নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ভাল করার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজের আগে ক্যাম্পে ছিলেন নেট বোলার হিসেবে। তখনকার কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের কথা শুনে পেয়েছেন সামনে বাড়ার সাহস। বোলিং যে ঠিকঠাক আছে সেই সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন হাথুরুই।
‘তখন উনি (হাথুরু) বলেছিলেন, এখন যা আছে সবই ঠিক আছে। চেষ্টা করবে নিজেকে প্রতিদিন একটু হলেও উন্নতি করার। আজকে একটু করব, কালকে একটু করব। নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।’
ক্রিকেটে হাতেখড়ির সময় নাঈম ছিলেন পেস বোলার। পেসার থেকে স্পিনার হয়ে ওঠার গল্প বলে দৌড়ে ছুটলেন নেটের দিকে। নাঈমের বোলিং দেখার জন্য দাঁড়িয়ে স্পিন বোলিং কোচ সুনিল যোশি ও কোচিং স্টাফের বাকিরা, ‘ক্রিকেট শুরু করেছি পেস বল দিয়ে। তখন উচ্চতা এত বেশি ছিল না। একাডেমির বড় ভাইরা বলেছে তুমি স্পিনার হও। তখন কোচ বাইরে ছিল, আসার পর উনিও বলেছেন স্পিনার হও। আমার কোচ (মোমিন ভাই) মূলত স্পিনার।’