ভয়াবহ নাইন ইলেভেন হামলার দুই দশক পূর্ণ হলো শনিবার। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সেই হামলার ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক সিনেমা। তবে বিখ্যাত নির্মাতা রবার্ট আল্টম্যান মনে করেন, সিনেমার অনুকরণেই আল কায়দা হামলা করেছিল সেদিন।
নাইন ইলেভেনের আগে ও পরে সিনেমার কায়দায় বহু হামলা হয়েছে। তবে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার ঘটনার পরে সন্ত্রাস নিয়ে যত ছবি তৈরি করা হয়েছে, এত ছবি আগে কখনও তৈরি করা হয়নি। অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধাই মনে করেন, নাইন ইলেভেন বদলে দিয়েছে সিনেমা শিল্পকে।
নাইন ইলেভেনের ঘটনার পরে ‘টুইন টাওয়ার’ স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। আর তাই তখন সিনেমায় টুইন টাওয়ারের দৃশ্য থাকলে তা সরিয়ে ফেলা হতো।
স্পাইডার ম্যান (২০০১) এর টিজারে দেখানো হয়েছিল টুইন টাওয়ার। সেটি সরিয়ে নেয়া হয়। ‘মেন ইন ব্ল্যাক টু’তে (২০০২) টুইন টাওয়ারের দৃশ্য ছিল, যা সরিয়ে ফেলার জন্য নতুন করে শুটিং করা হয়। আরও বেশ কিছু ছবিতে টুইন টাওয়ারের দৃশ্য থাকায় সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
পরবর্তীতে ২০০৬ সালে অলিভার স্টোন পরিচালিত আমেরিকান ডকুট্রামা ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’-এ ডিজিটাল পদ্ধতিতে টুইনটাওয়ার তৈরি করে দেখানো হয়। ছবিতে সেইদিনের ঘটনা এক পুলিশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছিল। একই বছর মুক্তি পাওয়া পল গ্রিনগ্রাসের ‘ইউনাইটেড ৯৩’-তেও টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা দেখানো হয়েছিল। দর্শক জানতে পেরেছিলেন অজানা অনেক তথ্য।
স্টিভেন স্পিলবার্গের ২০০৫ সালের ছবি ‘ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস’-এ যখন নিউ ইয়র্ক ধ্বংসের খবর পাওয়া যাচ্ছিলো, তখন এক মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে, ‘সন্ত্রাসীদের কাজ?’ এই একটি সংলাপই দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়েছিল নাইন ইলেভেনের ঘটনা।
২০০১ সালে আফগানিস্তান এবং ২০০৩ সালে ইরাকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। তবে যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকায় সমর্থন হ্রাস পেতে থাকে, সমালোচনা বাড়তে থাকে। ক্যাথরিন বিগেলোর দ্য হার্ট লকার (২০০০) এবং জিরো ডার্ক থার্টি (২০১২) দুটি ছবিতেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অবস্থানের নৈতিক অস্পষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
‘আই ইন দ্য স্কাই’ (২০১৫)-এর মতো ছবিতে ড্রোন যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় টিভি শো ‘হোমল্যান্ড’ (২০১১-২০২০)-এ দেখানো হয়েছে এক আমেরিকানের আল কায়দায় যোগ দেয়া এবং আমেরিকার মাটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনার কাহিনী।
নাইন ইলেভেনের আগেও সন্ত্রাসীদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সিনেমা। ‘ট্রু লাইস’, ‘ডাই হার্ড’, ‘দ্য ডেভিস ওন’ এবং ‘দ্য ক্রাইং গেম’-এ সন্ত্রাসী হামলা দেখানো হয়েছে। তবে নাইন ইলেভেনের পর থেকে হলিউডের ছবিতে সন্ত্রাসের সাথে মুসলিম সম্পৃক্ততা দেখানো হয়, আর আমেরিকানদের দেখানো হয় ‘হিরো’ হিসেবে।
হলিউডের বাইরের চলচ্চিত্রগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে ভিন্ন চিত্র। ইন্ডিয়ান-আমেরিকান নির্মাতা মিরা নয়ারের ‘দ্য রিল্যাকটেন্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’ (২০১২)-এ এক পাকিস্তানির চরিত্র দেখানো হয়েছিল যিনি আমেরিকায় থাকেন এবং মুসলিম হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাকে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রিজ আহমেদ।
আমেরিকান সৈন্যরা সরে যাওয়ার পরে আফগানিস্তান বর্তমানে আবারও তালেবানদের দখলে। এখন দেখার বিষয়, হলিউডের সিনেমায় বিষয়টি কীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।