চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নাইট ক্লাব তাণ্ডবে ৬০-৭০ জনকে বাঁচিয়ে আলোচনায় ইমরান ইউসুফ

নাইট ক্লাবে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে মানবতাকে যখন কলঙ্কিত করছিলো ওমর মতিন ঠিক তখনই সেখানে আটকে পড়া অন্তত ৬০-৭০ জনের জীবন বাঁচিয়ে মানবতার জন্য এক সাহসী দৃষ্টান্তের জন্ম দিচ্ছিলেন ২৪ বছর বয়সী ইমরান ইউসুফ।

মতিন ও ইমরান যেনো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একজন রাইফেল-হ্যান্ডগান হাতে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে কলঙ্কিত করেছেন মানবতাকে আর অন্যজন আরও বেশি মানুষকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ-কান্না চেপে রাখতে পারছেন না।

ইমরান বারবার বলছেন,‘অনেক মানুষ মারা গেলো! ওহ! আমি যদি আরও কয়েকজনকে ওইদিন বাঁচাতে পারতাম’। ধর্মের নামে সহিংসতায় যেখানে ঘৃণা জমেছে পাহাড় সমান সেখানে মানবতা যে হারিয়ে যায়নি, ইমরান ইউসুফ তারই প্রমাণ।

আজ সাধারণ মার্কিনীদের কাছে ইমরান ইউসুফ এক সাহসী নায়কের নাম। সেই কালো রাতে এই নায়কের দুঃসাহসী পদক্ষেপে ৭০ জনের জীবন রক্ষার সাহসী গল্প প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে সিবিএস নিউজে। কান্নারত ইমরানের সাক্ষাতকারে ফুটে ওঠে সে রাতের ভয়াবহতা এবং অসহায়ত্ব।

ইমরান ইউসুফ একসময় মার্কিন সেনাবাহিনীতে ছিলেন। মার্কিন মেরিন সেনাদলে নাম লিখিয়ে আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র দু’মাস আগে তিনি মেরিন ছেড়ে একটি নিরাপত্তা সংস্থায় কাজে যোগ দেন। অরল্যান্ডো পালস নাইট ক্লাবে ‘বাউন্সার’ বা নিরাপত্তার কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

গত শনিবার ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে পালস নাইট ক্লাবে অন্যান্য দিনের মতোই নিরাপত্তা রক্ষীর দায়িত্বপালন করছিলেন ইমরান। হঠাৎই গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞ কান, তাই মুহূর্তেই বুঝে ফেলেন ভারী অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে।

ইমরান বলেন,‘ প্রথমে তিন-চারটি গুলির শব্দ শুনি,শুনেই বুঝতে পারি ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ছে কেউ’।

গুলির সঙ্গে সঙ্গে উৎসবমুখর নাইট ক্লাবটিতে নেমে আসে আতঙ্কের ভয়াল নিরবতা। অনবরত গুলি শুরুর পর নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এই সময় পালসের পেছন দিকে ছিলেন ইমরান। আতঙ্কিত অন্যরাও ক্লাবের পেছন দিক দিয়ে বের হওয়ার পথ খুঁজছিলো। পালসের পেছনে একটি দরজা দিয়ে বের হওয়ার পথ। কিন্তু সেটি বন্ধ ছিলো। দরজা খোলার জন্য চিৎকার করেও কারও সাড়া পাননি তিনি। সাড়া দেয়ার মতো কেউ আসলে ছিলোই না। কারণ সবাই যেনো আতঙ্কে জমে গিয়েছিলো তখন। ‘হয় করো নয় মরো’ পরিস্থিতিতে এতোগুলো মানুষের কথা ভেবে ঝুঁকিটা নিয়েই ফেলেন ইমরান। সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দরজা আটকে রাখা ছিটকিনির ওপর।

ব্যস বিভীষিকা থেকে মুক্তির পথ উন্মোচিত হয়ে যায়। মৃত্যুপুরী থেকে বেরিয়ে আসে ৬০-৭০ জন মানুষ।

নায়ক হতে কিংবা সাবেক সেনা হিসেবে নয় বরং মানবতার ডাকে সহজাত প্রবৃত্তির বশেই সেদিন এমন কাজ করেছিলেন বলে ফেসবুকে লিখেছেন ইমরান। তবে সে রাতের দুঃসহ স্মৃতি তাকে আজীবন তাড়া করবে আক্ষেপ ভরা কণ্ঠে এ কথাগুলোই জানান তিনি।