রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বেগম রোকেয়া স্বরণী থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার। পুলিশ জানিয়েছে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সর্বশেষ তাকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের লায়ন্স ভবনের সামনে শণাক্ত করা গিয়েছিল।
সিজারের পরিবার বলছে, সরকারের কাছে তাদের অনুরোধ তারা যেন সিজারকে জীবিত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুবাশ্বার হাসানকে শণাক্ত করতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
সিজার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক করার পর যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন। একসময় সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। আলোচনা ডটকম নামে একটি সাময়িকীর সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিজার বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও সাংবাদিকতা করেছেন।
কয়েক বছর আগে দেশে ফেরার পর তিনি বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
বুধবার দুপুর থেকেই দক্ষিণ বনশ্রীতে সিজারের বাসার সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। শুরুতে ভিডিও ক্যামেরার সামনে কথা বলা নিয়ে সিজারের পরিবারের আপত্তি থাকলেও প্রায় দু’ঘণ্টা পর দোতলা বাসা থেকে নিচে নেমে আসেন সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন ও ছোট বোন তামান্না তাসমিন।
মোতাহের হোসেন উপস্থিত গণমাধ্যমকে বলেন: মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে সিজার বাসা থেকে বের হয়েছিল। বিকেল চারটায় ওর সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়। তখন সে বলেছিল ঘণ্টা দুয়েক পর কাজ শেষে বাসায় ফিরবে।
গত ২৫ অক্টোবর ছাত্র পরিচয়ে সিজারকে খুঁজতে কেউ এসেছিল। এসব কারণে নিজ বাসার সামনে সিসি ক্যামেরা সহ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছেন কি না জানতে চাইলে মোতাহের হোসেন বলেন: এলাকার সোসাইটি থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছিল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে সিজার নিখোঁজ জানিয়ে তার বোন তামান্না তাসমিন বলেন: আমরা ফোন দিয়েছি, বারবার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছিলাম, সব জায়গায় মোটামুটি খোঁজ নিয়ে আমরা রাত আড়াইটার দিকে খিলগাঁও থানায় একটি জিডি করি।
সাধারণত সিজার রাতে কখন বাসায় ফিরেন জানতে চাইলে তামান্না বলেন: সাধারণত সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই বাসায় ফিরে সিজার। প্রাইভেট কার কয়েকদিন ধরে নষ্ট থাকায় বেশি সম্ভবত উবার বা সিএনজিতে করেই কয়েকদিন ধরে যাতায়াত করছিল সিজার।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করে তামান্না বলেন: এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছে। আমরা আশা করছি যে খুব তাড়াতাড়ি সিজারকে ফেরত পেয়ে যাবো। সরকারের কাছে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সিজার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদালয়ে ছিল জানিয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সিজার সকাল সোয়া সাতটায় বাসার থেকে বের হন অফিসের উদ্দেশে বের হন, সকাল আটটা বা সোয়া আটটায় ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করেন।
বিকাল সাড়ে চারটার পর মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে সিজারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মশিউর রহমান বলেন: সাড়ে চারটার পর থেকে আগারগাঁও লায়ন্স ভবন, আইডিবি ভবনকেন্দ্রিক ওনার অবস্থান ছিল। ট্র্যাকিংয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এই জায়গায় তাকে পাওয়া গেছে।
‘পৌনে সাতটা থেকে সিজারের মুঠোফোন বন্ধ, সন্ধ্যা ৬ টা ৪১ মিনিটে তার মুঠোফোনে সর্বশেষ ফোন এসেছিল, তখন তিনি বেগম রোকেয়া স্বরণীর লায়ন্স ভবনের দিকেই ছিলেন।’
সিজারদের বাসায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে মশিউর রহমান বলেন: আমরা শুনেছি মাস খানেক আগ থেকে তার বাসায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কিছুদিন আগে ছাত্র পরিচয়ে কেউ তাকে খুঁজতে এসেছিল।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন: আমরা এখনো অনেক বিষয় নিয়ে পরিষ্কার না, ধারণা থেকে বলা যেতে পারে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে, কিংবা পারিবারিক কোন কোন্দল থাকতে পারে।
বর্তমানে আমারা তার বাড়ি পর্যন্ত তদন্ত পরিচালনা করেছি, যেহেতু তাকে বেগম, রোকেয়া স্বরণীতে সর্বশেষ অবস্থান করতে দেখা গিয়েছে আমরা তদন্তের প্রয়োজনে ওই এলাকাতেও যাবো।
তিনি বলেন: আমরা শুনেছি সিজার জঙ্গিবাদ বিরোধী বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেন, আমরা সব বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তদন্ত কাজ পরিচালনা করছি।
বুধবার সকালে সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন খিলগাঁওস্থ র্যাব-৩ এর ক্যাম্প অফিসে একটি অভিযোগপত্র দিয়ে জানান তার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-৩ পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. এমরানুল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই আমরা সিজারকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সরকারের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কাজ করত। আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তির সহযোগিতার মাধ্যমে তার অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।
বুধবার সকালে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন: কোনো নিখোঁজই কাম্য নয়, যদি কেউ নিখোঁজ হয়ে থাকে তাকে খুঁজে বের করা হবে।