এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বার অংশগ্রহণকারীদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ নম্বর কর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা রিটের শুনানিতে যুক্তির ত্রিমাত্রিকতা লক্ষ্য করা গেছে।
শুরুতেই রিটকারি আইনজীবী ইউনুছ অালী অাকন্দ আদালতে বললেন, ‘মাই লর্ড। ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বার অংশগ্রহণকারী ছেলে-মেয়েরা সারা বছর লেখাপড়া করেছে কোচিং করেছে। এখন হঠাৎ করে তাদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ নম্বর কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। তাদেরকে তো আগে থেকে জানানো হয়নি যে এ বছর থেকে ৫ নম্বর কাটা হবে। এতে তারা ডাক্তার হওয়ার আশা নিয়ে শেষ সময়ে এসে বঞ্চিত হচ্ছে। আর একই পরীক্ষায় প্রথমবার অংশগ্রহণকারীদের নম্বর ঠিক রেখে শুধু দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণকারীদের নম্বর কাটা একটা সাংর্ঘ্ষিক সিদ্ধান্ত।’
তবে, রিটকারি আইনজীবীর যুক্তির বিরোধিতা করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, ‘মাই লর্ড, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার যারা অংশগ্রহণ করছেন তারা এইচএসসি পরীক্ষার পর মাত্র কয়েক মাস পড়ালেখার সময় পায়। কিন্তু দ্বিতীয় বার অংশগ্রহণকারীরা প্রায় এক্সট্রা ১ বছরের বেশি পড়ার সুযোগ পান। এটাতো প্রথমবার অংশগ্রহণকারীদের সাথে বৈষম্য।’
দুই পক্ষের যুক্তির প্রেক্ষাপটে আদালত তার অভিমতে বলেন, ‘মি: আ্যাটর্নি জেনারেল, অনেক বছর ধরে চলে আসা একটি নিয়ম হঠাৎ বদলে ফেলতে হলে তা একটা নির্দিষ্ট সময় আগে জানিয়ে দিতে হবে। এখানে তা তো করা হয়নি। মাত্র কয়েক মাস আগে একটা নতুন সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবেন তা কি করে হয়? দ্বিতীয় বার ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারীরাতো জানতো তারা পূর্বের নিয়মেই এ বছর পরীক্ষা দিবে। এখন হঠাৎ তাদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ নম্বর কেটে নেয়ায় তারা তো বঞ্চিত হবে। তাই এ বছর যারা দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে তাদের প্রয়জনে ১ বছর আগে নম্বর কাটার বিষয় জানানো উচিত ছিল। তাহলে তারা হয়ত সেভাবে প্রস্তুতি নিত।’
এরপর আদালত ২০১৭- ২০১৮ বর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণকারীদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ নম্বর কর্তনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে নম্বর কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অাইনজীবী ইউনুছ অালী অাকন্দ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
দ্বিতীয় বার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে মেধা তালিকা তৈরির সময় ৫ নম্বর কেটে নেয়ার সিদ্ধান্তকে বেঅাইনী ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৭ আগস্ট হাইকোর্টে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের অাইনজীবী ইউনুছ অালী অাকন্দ।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে রিটে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫ নম্বর কর্তন করার সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।